ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়িয়ে ২০ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার আসামি। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে এসে রোববার (১৬ জুন) শাহবাগ থানাধীন কদম ফোয়ারার সামনে থেকে তিনি গ্রেফতার হন। এর আগে ওসি মোয়াজ্জেম একজন আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি-গোঁফ বড় করে চেহারাটাও কিছুটা পাল্টে ফেলেন তিনি।। আইনজীবীর আশ্বাসে কৌশলে হাইকোর্ট চত্বরেও প্রবেশ করেন তিনি । তবে আগে থেকেই মোয়াজ্জেম হোসেনকে নজরদারিতে রেখেছিল পুলিশ। আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য আসার সময় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে ডিএমপির শাহবাগ থানার পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। তাদের সহযোগিতা করে ডিএমপির সাদা পোশাকের পুলিশে সদস্যরাও। উচ্চ আদালতের সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তাকে নজরদারিতে রেখেছিল। গ্রেফতারের পর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। তাকে ফেনীতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
হাইকোর্টে মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে থাকা তার গাড়িচালক জাফর গণমাধ্যমকে জানান, সকাল ১০টায় তারা আইনজীবী সালমা ইসলামের চেম্বারে যান। সেখান থেকে তারা আদালতে গিয়ে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলাটির শুনানির জন্য আবেদন করেন। দুপুর একটার দিকে তাদের আবেদনের নম্বর (৪২৭৭০) পড়ে। তাদের জানানো হয় সোমবার সকাল দশটায় মামলাটির শুনানি হবে। এরপর তারা দুপুরের খাবার খেতে একটি রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে আদালত চত্বরের বাইরে বের হন। ওই সময়ে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে।
পুলিশের কাছে গোপন তথ্য ছিল, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এখানে থাকতে পারেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, সোনাগাজী থানায় তার (ওসি মোয়াজ্জেম) নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। গ্রেফতারের পরপরই আমরা সোনাগাজী থানায় যোগাযোগ করেছি। সেই থানার প্রতিনিধি এলে তাদের কাছে মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হবে। যতক্ষণ হস্তান্তর না করা হবে ততক্ষণ তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হবে। আদালতে কখন তুলবে এটা সোনাগাজী থানা পুলিশের সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন তিনি।
ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আত্মসমর্পণও করেননি। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।
এর আগে, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।