ঋতু পরিবর্তন, অসময়ে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাঙ্গুনিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি বেশি হওয়ার কারণে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। এভাবে তীব্র গরমে কাবু হচ্ছে শিশুরা। ডায়রিয়া, ব্রংকিউলাইটিস ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে এ ধরনের রোগীর আধিক্য দেখা গেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতাল, চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালসহ একাধিক চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। নিউমোনিয়ার পাশাপাশি রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগীরও দেখা মিলছে।
গত ১ মে দুপুর ১ টা পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগী এসেছে ৩৬০ জন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। আন্ত:বিভাগে পুরুষ ২৩ , নারী ২০ ও শিশু ২৫ জনসহ ৬৮ রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল ৪০ জন। এ ছাড়া বৃদ্ধ ও কয়েকজন শিশু শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৫০টি। অথচ সেখানে শুধুমাত্র গত এপ্রিল মাসেই চার শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে ৩শত ৩৬ জনই ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু। এদিন দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট কাউন্টারে রোগীর দীর্ঘ লাইন। দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে সংষ্কার কাজের কারনে বারান্দায় শয্যা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে রোগী। রোগীকে হাতপাখায় বাতাস করছেন স্বজনরা।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে উপজেলার শিলক ফকিরাহাট এলাকার বাসিন্দা ১ বছর ১ মাস বয়সের মো. আয়াত। ডায়রিয়া আক্রান্ত আয়াতকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সারেনি। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আয়াতের মা লাভলি আক্তার বলেন, ‘৩০ এপ্রিল দুপুরে হালকা জ্বর ছিল। বিকেলে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানো হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে ১ মে সকালেই সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে আসি।’ পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মরিয়ম খাতুন (৬৭) এসেছেন সরফভাটা থেকে। তিনি বলেন, গরমে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার স্বজনরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন চারবার নেবুলাইজড করতে হচ্ছে। অন্য একটি বেডে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর এলাকা থেকে এসেছেন সামশুন নাহার (৬৭)। তিনিও ডায়রিয়ার রোগী। দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাছির উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। আগে গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি হলেও এখন গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। বেশিরভাগের বয়স ৫ বছরের কম। ডায়রিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, প্রসূতি মা ও নিউমোনিয়ায় ভুগছে তারা।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মোমিনুর রহমান বলেন, “ঋতু পরিবর্তন, অসময়ে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি বেশি হওয়ার কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ একটু বেশি।” তিনি বলেন, ‘গরমে শিশুদের খাবার ও পানি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করানোর পাশাপাশি বাসি খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। বাচ্চাদের গায়ের কাপড় বার বার বদলাতে হবে। নয়তো শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঘাম আবারও ঢুকে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাপমাত্রা সহনীয় এমন স্থানে শিশুদের রাখতে হবে। অতিরিক্ত গরম-ঠা-া এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তরল খাবার খাওয়াতে হবে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।