ওড়না সরিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য করতেন প্রধান শিক্ষক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৫ই মে ২০১৯ ০৯:০৭ অপরাহ্ন
ওড়না সরিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য করতেন প্রধান শিক্ষক!

গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিপিড়নকারী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আজ রবিবার (৫ মে) সকালে অভিযোগের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ইউএনও মো. শিবলী সাদিক।

জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশিদা বেগমের বদলি হয়। পরে ওই বছরই সেপ্টেম্বরে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. আব্দুল আহেদ যোগদান করেন। নিয়মানুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই বিদ্যালয়ে চলতে থাকে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা। এর ধারাবাহিকতায় ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে নানাভাবে যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। কিন্তু নিপীড়নকারী ওই আব্দুল আহেদের হুশিয়ারী ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করলে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হবে। সেই ভয়ে শুরু থেকে কেউ কিছু না বললেও তার নিপীড়ন অসহ্য মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় নবম ও দশম শ্রেণির সেই শিক্ষার্থীরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিবেদককে জানায়, আমরা বান্ধবীরা মিলে যখন গ্রুপ ছবি তুলি, তখন ওই শিক্ষক আমাদের সাথে ছবি তুলতে আগ্রহী হত এবং আমাদের বুকের ওড়না সরিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য করতেন স্যার। শিক্ষার্থীরা প্রতিবেদককে আরও জানায়, নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গায়ে ও স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিত আব্দুল আহেদ। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বড় শিক্ষার্থীদের ওড়না ছাড়া নৃত্য পরিবেশনে বাধ্য করত। তাদের বয়সন্ধিকালে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষিকার কাছে না গিয়ে তার কাছে আসতে বলত এবং মাসিকের সময় কি কি করতে হবে সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের বলত। তবে এত নিপীড়নের পরও কারো কাছে ঘটনা না বলার হুশিয়ারী ছিল ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষকের। আর ঘটনা কারও কাছে বললে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যের ভয় দেখাত বলেও জানায় তারা।

এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারী নিয়মকে অবমাননা, নিজের ইচ্ছা মত ভর্তি বাণিজ্য ও অতিথি শিক্ষক নিয়োগ, সহকর্মীদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ, অতিরিক্ত ভর্তি ফি, অনিয়মিত উপস্থিতি, ভিন্ন অজুহাতে বেতনের সাথে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম আর অব্যস্থাপনার অভিযোগও ছিল। এদিকে, লিখিত অভিযোগের পর থেকে আব্দুল আহেদ বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে তার সাথে মোবাইল ফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একাধিকবার কল দিয়ে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে আগেই মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম এবং বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। যেহেতু একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান তাই নিয়মের মধ্যে থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং সেই প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জুবের আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. লতিফুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর-ই-জান্নাত। কমিটিকে আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব