কর্ণফুলী নদী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ,স্বামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২রা মে ২০১৯ ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
কর্ণফুলী নদী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ,স্বামী গ্রেফতার

রাঙ্গুনিয়া গৃহবধূ সাহিদা আক্তার শারমিন (২২)। বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র ছয় মাস হয়েছে। পরিবারের একমাত্র মেয়ে হিসেবে বাপের বাড়িতে সবার আদরের সন্তান ছিল সে। গত ১৮ এপ্রিল ভাইয়ের বিয়েতে স্বামী সহ গিয়ে প্রায় ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত থাকে সে। এরপর স্বামীর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে আসায় আবারও শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসে শারমিন। কথা ছিল স্বামী কর্মস্থলে যাওয়ার দুইদিন পর বাপের বাড়ি যাবে সে। কিন্তু বাপের বাড়ি যাওয়া হলো না তার। রহস্যজনক ভাবে ৩০ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর ১ মে কর্ণফুলী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী নদী থেকে সাহেদা আক্তার শারমিন (২২) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার (১ মে) বিকালে রাউজান উপজেলার খেলারঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এটি পরিকল্পীত হত্যাকান্ড উল্লেখ করে ঐদিন রাতেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন গৃহবধূর পিতা মো. শহিদুল্লাহ। এসময় নিহত গৃহবধূর স্বামী মো. আলমগীরকে (৩০) গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজাতে প্রেরণ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে গৃহবধূর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়। 

জানা যায়, বুধবার (১ মে) সকাল নয়টার দিকে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের উকিলপাড়া এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। লাশটি ভাসতে ভাসতে পূর্বদিকে রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী এলাকার দিকে চলে যায়। পরে ভাটার সময় রাউজানের খেলারঘাটে লাশটি আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকাল ৪টার দিকে লাশটি উদ্ধার করেন। এর পূর্বে তিনটার দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন গৃহবধূর স্বজনরা। তারা লাশটি দুইদিন আগে হারিয়া যাওয়া গৃহবধূ শারমিনের বলে নিশ্চিত করেন।তার স্বজনরা জানান, গত বছরের ২ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা মকবুল আহমেদ বাড়ির মো. শহীদুল্লাহর কন্যার সাথে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ নোয়াগাঁও ফকিরখীল এলাকার নবীর হোসেনের পুত্র মো. আলমগীরের বিয়ে হয়। আলমগীর ঢাকার ধানমন্ডি ৬/এ আবাসিকে একটি ভবণে কেয়ারটেকারের কাজ করেন।

বিয়ের পর থেকে সুখেই সংসার কাটছিল তাদের। বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে স্বামী সহ বাপের বাড়িতে প্রায় ১০ দিন থাকার পর ২৮ এপ্রিল শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। এরপর সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮ টায় ডলফিন বাস যোগে স্বামী ঢাকা চলে যায়। পরদিন ৩০ এপ্রিল ভোরে নিখোঁজ হয় সে। এই ব্যাপারে তার বাবা ঐদিনই রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। পরে ১ এপ্রিল কর্ণফুলীতে যুবতীর লাশ ভাসার খবরে দুপুর তিনটার দিকে রাউজার খেলাঘাট এলাকায় যান স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা গিয়ে দেখে এটি তাদের হারিয়া যাওয়া সাহেদা আক্তার শারমিনের লাশ। গ্রেফতার হওয়ার আগে তার স্বামী মো. আলমগীর বলেন, ‘শারমিন বেশ কিছু দিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। এই নিয়ে আমরা কোরআনি ও ডাক্তারি চিকিৎসা চালিয়েছি। ৩০ এপ্রিল ভোরে সে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা তাকে বিভিন্ন সম্ভাব্য স্থানে খুঁজেছিলাম।

এই বিষয়ে নিহতের বাবা শহীদুল্লাহ জানান, মেয়ে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে বৈদ্যের বাড়িতে গিয়ে হাজিরা দেখেন। পরে রাঙ্গুনিয়া থানায় গিয়ে একটি নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়। সাংসারিক অশান্তির কারণে পরিকল্পীতভাবে তারা আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।’এদিকে বিকাল পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম চৌধুরী ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা।এই ব্যাপারে ওসি ইমতিয়াজ ভূঞা বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সুরতাহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে নিহত গৃহবধূর পিতা বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে গ্রেফতারের পর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গৃহবধূর মৃত্যুর ব্যাপারে আমরা ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।