বরিশালে দিন দিন অব্যাহতভাবে শিশুশ্রম বেড়েই চলছে। বরিশালের বিভিন্ন কলকারখানা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায়ই এখনও বেআইনিভাবে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হয়। শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। দারিদ্র, অশিক্ষা আর পেটের দায়ে কখনো অটোরিক্সার চালকের আসনে, কখনো ভাঙারী দোকানে, কখনো বাসের হেলপার আবার কখনো কখনো হোটেল-রেস্তোরায় কাজ করতে দেখা যায় দশ-বারো কিংবা চৌদ্দ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের। শুধু তাই নয়, অহরহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন- বিভিন্ন ওয়ার্কশপে, নির্মাণ কাজ, হোটেল-রেস্তোরা, ভাঙারী দোকান, বিড়ি কারখানা, জুতার কারখানা এবং বাস-ট্রাকে আশঙ্কাজনক হারে দিনদিন বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। তবে সঠিকভাবে কেউ-ই বলতে পারছেন না বরিশালে ঝুঁকিপূর্ণ বা শিশু শ্রমিক কতজন আছে। অবশ্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বরিশাল অফিস সূত্রে জানা যায়, এ যাবত প্রায় ৮শ’র মতো শিশু শ্রমিক তারা শনাক্ত করেছেন। যাদের মধ্যে ৫শ’ ৪ জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে নিরসন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবী করেন তারা। অপরদিকে সচেতনমহল বলছেন, মানবিক কারণেই নারী ও শিশু শ্রমিকদের প্রতি নজর দিতে হবে। না হয় সরকারের মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন এবং মানব উন্নয়ন সূচকের অগ্রগতি অধরাই থেকে যাবে। বিভিন্ন সংগঠন শিশুদের নিয়ে কাজ করলেও শিশু শ্রম নিরসনে কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা জানা যায়নি। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। অবশ্য শিশু শ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা মাঠ পর্যায়ে জড়িপের মাধ্যমে ৫শ’ ৪জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধুব্ধকরণের মাধ্যমে নিরসন করতে সক্ষম হয়েছেন।
সরকারিভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও শিশুদের কাজে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন ও মালবাহী ট্রাকে হেলপার হিসেবে কাজ করছে অসংখ্য শিশু। বিভিন্ন পরিবহন, নির্মাণ কাজ, ওয়ার্কশপ কিংবা হোটেল রেস্তোরায় কম পারিশ্রমিকে সহজে পাওয়া যায় বলে মালিক কিংবা শ্রমিক সর্দারদের প্রথম পছন্দ শিশু শ্রমিক। সা¤প্রতিক সময়ে বরিশাল নগরীতে ব্যাটারী চালিত রিক্সা, অটোরিক্সার পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদেরকে অটোরিক্সা এবং রিক্সা চালাতে দেখা যায়। তাছাড়া নগরীর অলিগলিতে অটোরিক্সা মেরামত এবং তৈরী করার জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্যারেজ। যে সব গ্যারেজে গেলে সহজেই চোখে পড়বে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ কতটা বেড়েছে। জাতিসংঘ প্রণীত শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রত্যেককে শিশু বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রত্যেককে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ১৪ বছরের মধ্যে সকলেই এ দেশের শিশু। জাতিসংঘের শিশু সনদ এখন একটি আন্তর্জাতিক আইন। এতে বলা হযেছে, শিশুর বেঁচে থাকা তাদের জন্মগত অধিকার। আর শিশুদের অধিকারের মধ্যে রয়েছে, স্নেহ, ভালবাসা ও সমবেদনা পাওয়ার অধিকার, পুষ্টিকর খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার, অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার অধিকার, একটি নাম ও নাগরিকত্ব, পঙ্গু শিশুদের বিশেষ যত্ন ও সেবা শুশ্রুষা পাওয়া অধিকার, দুর্যোগের সময় সবার আগে ত্রাণ ব্যবস্থা পাওয়ার অধিকার, সমাজের কাজে লাগার উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠার এবং ব্যক্তি সামর্থ্য অর্থাৎ সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাওয়ার অধিকার, শান্তি ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ পাওয়ার অধিকার এবং এ সব অধিকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে বিশ্বের সব শিশুর ভোগের অধিকার থাকবে। বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের বিকাশের জন্য রয়েছে নানা আইন। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশু অধিকার। সমাজ থেকে শিশু-কিশোরদের যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কথা তা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুনীতিকে পাশ কাটিয়েই শিশুদের ভারী গৃহশ্রমসহ বেআইনি কাজে যুক্ত করা হচ্ছে।