রাঙ্গুনিয়ার হান্নান মিয়া (৩৬)। ক্যান্সার ধরা পড়েছে একবছর হয়। এই চিকিৎসা প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ। এরই মধ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই তার পৈত্রিক জায়গা ও ব্যক্তিগত সব সঞ্চয় চলে গেছে। এখন একেবারেই শূন্য হাতে স্ত্রী ও ৪ বছরের শিশু কন্যা নিয়ে অনেকটা চিকিৎসা ছাড়াই ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর ঘুনছেন তিনি। অতিস্বত্বর আরও অন্তত ১০টি ক্যামোথ্যারাপী সহ নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে না নিলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরজন্য লাগবে আরও অন্তত ১০ লাখ টাকা। উপজেলার চন্দ্রঘোনা রেশমবাগান দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর এলাকার আব্দুস সালাম মিয়ার পুত্র হান্নান। পরিবারে ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে সবার বড় সন্তান সে। পড়ালেখা শেষে ব্রাক ব্যাংকে সে চাকুরী পাই। এরপর বিয়েও করেন। বছর ঘুরে সংসারে আসে এক কন্যা সন্তান। এভাবে সবকিছু শেষে যখন নিজের সংসার নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন তখনই ধরা পড়ে মরণব্যাধী ক্যান্সার। এখন আর ব্যাংকে যেতে পারে না হান্নান। দিন দিন সে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তার স্ত্রী সামশুন নাহার মুক্তা জানান, হান্নান ব্রাক ব্যাংক চট্টগ্রাম মুমিন রোড শাখায় কো-অর্ডিনেশন্স অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মরণব্যাধী এই রোগের কারণে এখন তিনি ব্যাংকে যেতে পারে না। মাঝেমধ্যে দুইএকদিন ব্যাংকে যায় সে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে প্রাতিষ্ঠানিক একটা বেতন দেন এবং ব্যাংকের অনুদান, সঞ্চয় ও পৈত্রিক জায়গা সব বিক্রি করে ইতিমধ্যেই তার প্রায় সব শেষ। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সবকিছু হারিয়ে অসহায় হয়ে চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু দেখা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই আমার। হান্নান বলেন, এতো দিন আমার যা আছে সব টাকা পয়সা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আর পারছি না। যে কারণে আমার চিকিৎসা বন্ধ। দেশে কোটি কোটি মানুষ থাকতে টাকার অভাবে আমি কি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো? এই বলে কান্নায় ভেঙে পরেন হান্নান।
তিনি আরও বলেন, "গত একবছর আগে আমি যখন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি, তখন চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারি আমার পেটে একটা টিউমার পেটে গিয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো আমি ঢাকা শ্যামলী হাসপাতাল ও পরে ডেল্টা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পরে আমার মরণব্যাধী ক্যান্সার হয়েছে। আমি ব্যাংকে ছোট একটা চাকুরী করতাম, যেটা দিয়ে আমার সংসার কোনমত চলতো। একবছর ধরে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্ব শেষ হয়েছে আমার। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা না করেই ঘরে বসে আছি।
মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) তাদের এই দুর্দশার কথা আলাপকালে তার ঘরে আসেন রাঙ্গুনিয়ার শিলকের সন্তান ও চট্টগ্রামের ওয়ালটন লাবিব মার্কেটিং কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী শাখাওয়াত হোসেন। তার অসুস্থতার খবর শুনে তাকে আর্থিক সাহায্য করতে গিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, হান্নানের ছোট ভাই আমার ড্রাইভার হিসেবে চাকুরী করতেন। সেই হিসেবে আমি জানি, সে খুব ভাল একজন মানুষ। ব্রাক ব্যাংকে একটি চাকুরী করেন। এতোদিন তিনি তার সাধ্যমত চিকিৎসা করিয়েছেন। তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেছেন তার অতিস্বত্বর ক্যামোথ্যারাপি সহ চিকিৎসা শুরু করতে হবে। গত একবছর ধরে তিনি চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে তিনি ও তার পরিবার নিঃস্ব প্রায়। টাকার অভাবে এই মুহূর্তে তার পক্ষে চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাই আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে তার জন্য সহযোগিতা প্রার্থনা করছি। আমি নিজেও তার জন্য সাহায্য করছি আপনারাও এগিয়ে আসুন।
হান্নানের মা বিবি জহুরা খাতুন (৭০) বলেন, গত একবছর আগে হঠাৎ হান্নান দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পরে মরণব্যাধী ক্যান্সারের। টাকার অভাবে আমার সন্তান ঢাকার বড় হাসপাতালে চিকিৎসা না করে বর্তমানে চট্টগ্রামে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। সিএসসিআরে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফের কাছে চিকিৎসাধিন রয়েছে হান্নান। তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা অনেক খরচের। এই খরচ চালাতে গিয়ে আমার সন্তান এখন নিঃস্ব। চিকিৎসা করাতে লাগবে আরও কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এত টাকা আমরা গরিব মানুষ পাব কই! আপনারা চাইলে আমার সন্তান বাচতে পারে। কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন হান্নানের মা। তিনি ছেলেকে বাঁচাতে ড. হাছান মাহমুদ সহ সকল বৃত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
আর্থিক সাহায্যের টাকা পাঠানোর ঠিকানা: একাউন্ট নাম: সাখাওয়াত হোসেন, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ০১৬১১১১০০০০০৫৬৩, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, মোহরা শাখা, চট্টগ্রাম। যোগাযোগ করার জন্য: মোবাইল নং: ০১৮৫১-৩৯৪৪১৮ (হান্নান)। ০১৮১৯-৬৩৪৬২৯ (সাখাওয়াত হোসেন)।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।