
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯, ২১:৩৭

ভোলার বোরহানউদ্দিনে অন্তঃসত্ত্বাস্ত্রী রেখা আক্তারের মৃতদেহ হাসপাতালে ফেলে স্বামী মো. ফরিদ ও তার পরিবার পাঁচদিন ধরে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। রেখা উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের মানিকা গ্রামের মো. কামালের মেয়ে। ফরিদ একই উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের আট নাম্বার ওয়ার্ডের বাটামারা গ্রামের মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ রেখার লাশ গ্রহণ করে ময়না তদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ময়না তদন্ত শেষে লাশ রেখার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করলে শুক্রবার মরদেহ দাফন করা হয়। গত পাঁচদিন ধরে রেখার বাবার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। রেখার স্বজনরা রেখাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। হত্যা এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চা ল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার রেখার বাবার বাড়িতে তার বাবা কামাল,মা পারভিন ও একমাত্র ভাই সোহাগ জানান, দুই বছর আগে নিজেদের প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিক সম্মতিতে রেখা-ফরিদের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই-তিন মাস যেতে না যেতেই নানা অযুহাতে ফরিদ, তার মা রোশনা বেগম ও ননদ নাজমা বেগম রেখাকে মারধর করতো। রেখা চার মাসের অন্ত:সত্ত¡া হওয়া সত্তে¡ও ৭-৮ দিন আগে মারধর করলে রেখা বাবার বাড়িতে চলে আসে।ঘটনার ৩ দিন আগে রেখাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে স্বামীর বাড়ি পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে রেখার স্বামী ফরিদ তার শাশুড়ি পারভিন বেগমকে রেখা অসুস্থ জানিয়ে হাসপাতালে আসতে বলেন। রেখার বাবা ও ভাই বাড়িতে না থাকায় পারভিন বেগম এক প্রতিবেশীকে নিয়ে হাসপাতালে যান। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে ফরিদ ও তার পরিবারের কাউকে খুঁজে পাননি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পান। এক পর্যায়ে হাসপাতালের জর”রী বিভাগে রেখার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। রেখার গলায় কালো গভীর দাগ ছিলো বলে তিনি জানান। রেখাকে গোসল করিয়েছেন প্রতিবেশী লতিফা খাতুন। তিনি জানান, রেখার গলায় গভীর দাগ ছাড়াও ডান পাশের হাতে দাগ ছিলো।
ওই সময় দ্বায়িত্বরত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুবাশ্বির হাসান লিমন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই রেখা মারা গেছে। তার গলায় ফাঁস নেবার মতো দাগ ছিলো। পুলিশ তদন্ত করলে হত্যা না আত্যহত্যা তা পরিস্কার হবে। এদিকে সরজমিনে সোমবার দুপুরে ফরিদের বাড়িতে তার ঘর রশি দিয়ে আটকানো দেখা যায়। বাড়িতে ফরিদ বা তার স্বজন নেই। অন্য ঘরেও কোন পুরুষ লোক পাওয়া যায়নি। অন্যান্য ঘরের মহিলারা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা কোথায় গেছেন বলতে পারেনা। পাশের ঘরের তহুরা বেগম জানান, তিনি কিছু বলতে পারেননা। আরেক ঘরের ষাটোর্ধ্ব তহুরা বেগম জানান, রেখাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন তিনি হাতের শিরা দেখেছেন। শিরা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন থানার ওসি অসিম শিকদার জানান, রেখার মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে হত্যার আলামত পেলে রেখার স্বজনরা মামলা না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব