ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ। তিনি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্যা গ্রামের জামাল উদ্দিন সরকারের ছেলে। ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে স্থায়ীভাবে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে বসবাস শুরু করেন। এ সময় তিনি সেখানকার ‘মসজিদে নুর’ নামে একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এ ঘটনায় শোকের মাতম চলছে তার গ্রামের বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার পরিবার-স্বজনরা। পরিবার জানায়, মেধাবী আব্দুস সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে সেখানেই কৃষিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পিএইচডি করেন নিউজিল্যান্ডে। পরবর্তীতে তিনি ওই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
এদিকে, নিউজিল্যান্ডে বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুদিন বসবাস করার পর তার বড় ছেলে তোহান মোহাম্মদ দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস করছেন। তোহান বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। আর তার অপর দুই ভাই তারেক, তানভির ও মা কেশোয়ারা সুলতানাকে নিয়ে বাবা ড. আব্দুস সামাদ সেখানেই থাকতেন।অন্যদিকে ড. আব্দুস সামাদ নিহতের সংবাদ পৌরসভার মধুরহাইল্যা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছালে শোকে কাতর হয়ে পড়েন স্বজন ও পরিবারের লোকজন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভাইয়ের শোকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন ছোটভাই মতিয়ার রহমান। তারা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না এ ঘটনা। ড. আব্দুস সামাদ পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। তার বড় ভাই আসাদ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। অন্য দুই ভাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
নিহতের ছোট ভাই হাফেজ হাবিরুর রহমান জানান, তারা এই হত্যাকান্ডে অত্যন্ত মর্মাহত। তারা চান দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক এবং ড. সামাদের লাশ অবিলম্বে বাংলাদেশে এনে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। এদিকে ড. সামাদসহ মুসল্লিদের হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বাদ আছর নাগেশ্বরী বাজারে ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে একটি মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার (১৫ মার্চ) জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
দেশটির সাউথ আইল্যান্ডে আল নূর মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে অন্তত ৫০টি গুলি করা হয়েছে। সামাজিকমাধ্যমে মসজিদের ভেতর থেকে গোলাগুলির লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে যখন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তখন শুক্রবারের জুমার নামাজের প্রস্তুতি চলছিল। পার্শ্ববর্তী লিনউড মসজিদেও হামলায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, একটি আধা স্বয়ংক্রিয় শর্টগান ও রাইফেল দিয়ে সাউথ আইল্যান্ডে আল নূর মসজিদে অন্তত ৫০টি গুলি ছোড়েন ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটন ট্যারেন্ট। তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন থেকে এসেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী তরুণ বলেন, আমি গুলির শব্দ শুনে যতটা সম্ভব দৌড়ে পালিয়েছি। এ সময় আমি অনবরত শুধু গুলির শব্দ শুনেছি। হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত এক নারীসহ চার ব্যক্তিকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আটকের সময় তাদের একজন সুইসাইড ভেস্ট পরা অবস্থায় ছিলেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।