প্রকাশ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৩
দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়া। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউপাতার শো শো শব্দ। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালু। আর সমুদ্রের জলরাশির ঢেউ খেলা। সাজ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্য, বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পরার মতো দৃশ্য। এই গল্প জাহাজমারা ও তুফানিয়া সমুদ্র সৈকতের। আকর্ষণীয় ওই স্থানে শীতের মৌসুমে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছিল। তাই রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত দিনক্ষণে গন্তব্য আমাদের সেখানে।
খুব ভোরবেলায় ক্লাবের সদস্যরা একত্রিত হলাম। এক এক করে উঠে পড়লাম নিজেদের মটরসাইকেলে। যাত্রা শুরু, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের খালগোড়া খেয়াঘাটে। এবার দারছিরা নদীর পার হলাম। নেমে পরলাম উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরগঙ্গা এলাকায়। ফের পৌনে এক ঘন্টার বিরামহীন যাত্রা, এবার গন্তব্য জাহাজমারা সৈকতে। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি সবুজ বন। গাঁয়ের আঁকাবাকা মেঠোপথ ধরেই চলছি মটর সাইকেল শোভাযাত্রায় আমরা। আমাদের অপেক্ষায় রইল ওখানকার স্থানীয় কয়েকজন সহকর্মী। যেতে যেতে জাহামারার সৈকতের অদুরে অপেক্ষারত সহকর্মীদের সাথে দেখা । তখন ঘড়ির কাটায় সময় সকাল ১০টা বেজে ১৫ মিনিট।
পরে সকলে একত্রিত হয়ে প্রথমে জাহাজমারা সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথে সারি সারি ঝাউবন আর পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত পরিবেশ। কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছাই সৈকত প্রাঙ্গণে। চিকচিকে বালুতে পা ফেলে সৈকতে পৌঁছাই। ওখানে দাড়িয়ে যেখানেই তাকাই দেখি, লাল কাঁকড়াদের ছুঁটোছুঁটি আর সাদা ঝিনুকের সমারাহ। কানে বাজে ঝাউবনের শো শো শব্দ। আর অতিথির পাখির কিচিরমিচির ডাক। হালকা বাতাসে চোখ বুজলেই মনে হয় কোন এক স্বপ্ন রাজ্যের অতিথি আমরা। আর প্রকৃতি সেখানে ওই রাজ্যের বাসিন্দা। অতিথির জন্য অপ্যায়নে কোন কমতি নেই প্রকৃতির। এ যেন এক অনন্য সুখের স্পন্দন । ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে এর আবদার অতুলনীয়।
প্রকৃতির সাথে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে এবার আরেক স্বপ্নরাজ্যে ছুটছে আমরা। এবারের গন্তব্য তুফানিয়ার চরে। জাহাজমারা স্লুইসগেটে আমাদের অবস্থান। স্লুইসগেট বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সওদাপাতি কিনে নিলাম। এবার ওখানে মটরসাইকেল রেখে নৌ-পথে যাত্রা শুরু।
তুফানিয়ার পথে পথে -
চারদিকে নদী আর মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা সবুজবনা লে সৃষ্টি এ দ্বীপের নাম তুফানিয়া। ট্রলার থেকে নেমে সকল সহকর্মীর হাটতে রইল সমুদ্রতটে। প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘীরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। দলবেঁধে হাটতে হাটতে কেউ ঝাউবাগানে মধ্যে ঢুকে পড়ল। কিছুক্ষণ হাটতে হাটতে দেখা মিলল জেলে নৌকার কাছেই অসংখ্য অতিথি পাখি। উড়ন্ত পাখিদের মনোরম দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার চেষ্টা করছি। এরপর বনের মধ্য দলবেঁেধ ঘোরাঘুরি শেষে আমাদের ট্রলারে উঠে পড়ল সবাই। নয়নাভিরাম দৃশ্যঘেরা এ দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিমের আকাশে। ট্রলারে উঠে এবার খাবারের আয়োজন। তুফানিয়ার অদূরে নদীর মাঝে ট্রলার নোঙ্গর করল মাঝি। ট্রলারে বসেই খাবার সেরে নিলাম। এবার ফেরার পালা। ছুঁটছি আপন নীড়ে। কিছুক্ষণ পরে আমাদের ট্রলার এসে পৌঁছালো সেই জাহাজমারা স্লুইসঘাটে। ফের মটরসাইকেল যোগে উপজেলা সদর এসে পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা।
জাহাজমারা যাতায়াতের একাধিক পথ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি ল রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ওইসব লে ডেকের ভাড়া ৩৫০ টাকা। সিগন্যাল কেবিন ভাড়া ৬০০ টাকা এবং ডাবোল কেবিন ভাড়া ৯০০-১৮০০ টাকা। এছাড়া ভিআইপি কেবিনও রয়েছে লে । ঢাকা সন্ধ্যা ৬ টায় লে যাত্রা শুরু করলে পরদিন দুপুর ১১ কিংবা ১২ টায় কোড়ালিয়া ল ঘাট পৌঁছে যাবেন। ওইখান থেকে মটর সাইকেল যোগে ২০ মিনিটের মধ্যে রাঙ্গাবালী খালগোড়া বাজার খেয়াঘাট যাবেন।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
ইনিউজ ৭১/এম.আর