বাংলাদেশ আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, আইএমএফের সব শর্ত মেনে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্তে সম্মত হওয়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এ সময়, ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধ ছিল। বিশেষ করে মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন এবং কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি।” এর আগে, চলতি মাসে ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরকালে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলারের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।
এছাড়া, তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফের আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায়, সরকারের কাছে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ঋণের শর্তাবলীর বিরুদ্ধে আরও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আইএমএফের চাহিদা ছিল, দেশের মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, কিন্তু ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে আমরা এটি পুরোপুরি কার্যকর করতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “আইএমএফ আমাদের শর্তগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, তবে আমাদেরও কিছু দাবি রয়েছে, এবং আমরা নিজেদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা বজায় রাখতে চাই।” এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে, সরকার নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট তৈরি করতে এবং প্রয়োজন হলে আইএমএফের ঋণের কিস্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমদ জানান, সম্প্রতি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরেন তিনি, সাথে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের উপস্থিতিতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তবে আইএমএফের শর্তাবলীতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো পরিষ্কার।
এ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ সরকার নিজেদের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া আরো মজবুত করতে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও আইএমএফ কিস্তি প্রদান করতে না পারে, তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।