মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারণে নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় চেয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (United Nations High Commissioner for Refugees) বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। ইউএনএইচসিআর, সোমবার (২৮ এপ্রিল) তাদের চিঠিতে এ অনুরোধ জানায় এবং জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা নতুন রোহিঙ্গাদের দ্রুত আশ্রয় দেওয়া প্রয়োজন।
এই অনুরোধটি জানিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনের মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আনাদোলুকে জানান, ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে একটি চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ করেছে, এবং সেই চিঠিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আশ্রয় দরকার।
এদিকে, এসব নতুন রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরের আশপাশে অস্থায়ী তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছে, এবং কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা স্থানীয় স্কুল, মসজিদসহ অন্যান্য অবকাঠামোতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ত্বরিত হয়ে উঠেছে।
একইভাবে, নতুন আগত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবার রয়েছে, যার মধ্যে গত সপ্তাহেই বাংলাদেশে এসেছে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার। এই পরিবারগুলো বেশিরভাগই রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা, যারা নাফ নদী পার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তবে, ইউএনএইচসিআরের অনুরোধের পরও বাংলাদেশ সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা এখনও কোনো সাড়া দিইনি কারণ ক্রমাগত রোহিঙ্গাদের ঢল বাড়তে থাকলে আমাদের দেশে তাদের পুনর্বাসন আরও জটিল হয়ে পড়বে।”
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলার কারণে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তখন থেকেই কক্সবাজারে বসবাসরত প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চালু রয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষা সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সম্প্রতি, রাখাইনে নতুন সংঘাত শুরু হয়েছে, যেখানে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলমান। এর ফলে, রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, এবং এই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আরও বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।