হাকিমপুর হিলিতে উদ্বোধন হলো ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, নিজস্ব প্রতিনিধি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: বুধবার ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৫১ অপরাহ্ন
হাকিমপুর হিলিতে উদ্বোধন হলো ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ

"জ্ঞানে-বিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়" এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলিতে শুরু হলো ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ-২০২৫। এই উপলক্ষে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা পরিষদের হলরুমে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়। 


এদিন বিকেলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়। মেলার উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহমদ আহসান হাবিব, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম, একাডেমিক সুপারভাইজার সাখাওয়াত হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. সুজন মিঞা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ফেরদৌস রহমান, উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. আমিনুল ইসলাম এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম সহ আরও অনেকে। 


আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা মেলায় আগত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রদর্শিত ১৪টি স্টল পরিদর্শন করেন। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী বিষয় এবং প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন। অতিথিরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের কাজের প্রশংসা করেন। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, "এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের মাধ্যমে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের নতুন উদ্ভাবনী বিষয় প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। এই মেলার মাধ্যমে তারা তাদের জ্ঞান ও চিন্তাভাবনাকে আরও বিকশিত করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে তাদের নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রেরণা জোগাবে।"


উপজেলা আইসিটি প্রোগ্রাম অফিসার জান্নাতুন ফেরদৌসী জানান, এবারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় স্টল প্রদর্শনীতে জুনিয়র গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বাংলাহিলি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, তাদের প্রকল্প ছিল "অটোকাট অফ পাওয়ার সিস্টেম"। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, তাদের প্রকল্প ছিল "বায়ো ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক", এবং তৃতীয় স্থানে ছিল বিশা পাড় আদর্শ স্কুল, তাদের প্রকল্প ছিল "ফুট স্টেপ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম"।


সিনিয়র গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে হাকিমপুর সরকারি কলেজ, তাদের প্রকল্প ছিল "বন্যা সতর্কীকরণ এলামরিং ব্যবস্থাপনা"। দ্বিতীয় স্থানে ছিল হাকিমপুর মহিলা কলেজ, তাদের প্রকল্প ছিল "হৃদপিন্ডের মডেল"। এছাড়া অলিম্পিয়াডে জুনিয়র এবং সিনিয়র গ্রুপের ছয়জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। 


এই মেলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা একদিকে যেমন তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে, তেমনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, "আমরা আশা করি, এই মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে দেশের জন্য আরও বেশি উদ্ভাবনী কাজ করবে এবং তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করতে পারবে।"


অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনে আরও ভালো কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। পুরস্কৃত শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বড় প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের পরবর্তী জীবনে বড় কিছু করতে উৎসাহিত করবে। 


এবারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের প্রতিযোগিতা এবং প্রদর্শনী প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন উদ্ভাবনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তোলে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনগুলোর জন্ম দিতে পারে। 


পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা মনে করেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও চিন্তা শক্তি আরও বিকশিত হয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এর সম্প্রসারণ ঘটবে। 


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের আয়োজন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও গবেষণায় উৎসাহ যোগানোর পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে, যা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।