দেশে চলমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বুধবার (২৭ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বলেছেন, দেশে একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অধিকারবঞ্চিত মানুষের আকাঙ্ক্ষার হিসাব এবং পলাতক স্বৈরাচারের প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “পলাতক স্বৈরাচারের ১৫ বছরের শাসনে অনিয়মের পাহাড় তৈরি হয়েছিল, কেড়ে নেওয়া হয়েছিল জনগণের অধিকার। সেই হারানো অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন। কিন্তু এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।”
তারেক রহমান দাবি করেন, দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অস্থিতিশীলতার ঘটনা ষড়যন্ত্রকারীদের সক্রিয়তারই প্রমাণ। তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরাবে? এর পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে হবে।”
তিনি জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনকে উদ্দেশ্যভ্রষ্ট করার ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, “যারা বিদেশে বা লুকিয়ে আছে, তারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। তাদের লক্ষ্য জনতার আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা।”
তারেক রহমান চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সরকারের দায়িত্ব জনগণের আস্থা বজায় রাখা। তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কোটি কোটি পরিবারকে দৈনন্দিন ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই ইস্যু ব্যবহার করা হতে পারে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকার যেন এমন কিছু না করে যা ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরায়। শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ন্যায্য আন্দোলনের সুরক্ষা এবং অরাজকতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তারেক রহমান জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জনগণের ন্যায্য আন্দোলন যেন বিদেশি অপশক্তি বা স্বৈরাচারের দোসরদের দ্বারা লক্ষ্যচ্যুত না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।” তিনি দাবি করেন, “স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সরকারের ওপর আস্থা রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। সরকারকে সময় দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।”
তারেক রহমান দেশের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে বহু পরিবারকে প্রতিদিন কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, “জনগণ যদি সরকারের ওপর আস্থা হারায়, তাহলে এটি ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সুবিধাজনক হবে।”
তারেক রহমান দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রত্যেক নাগরিককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারকে সময় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে হবে। জনগণের সহনশীলতা এবং ঐক্যই দেশকে মাফিয়ামুক্ত এবং গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করবে।”
তিনি বলেন, “হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশে মানবিক মর্যাদা, সাম্য এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।”
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।