বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মদদদাতা উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের খেতাব ‘বীর উত্তম’বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। জিয়া ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরও চার খুনির খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
খেতাব বাতিল হওয়ায় জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।জিয়াউর রহমান ছাড়া অন্য যে চারজনের খেতাব বাতিল করা হবে তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন।
মঙ্গলবার রাজধানীর স্কাউট ভবনে আয়োজিত দিনব্যাপী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে জামুকা। এরপর মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’;
নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল।স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
মঙ্গলবারের সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আরও যে মদদদাতা রয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। অন্য দুই সদস্য হলেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিলের বিষয়টি সভার আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই-বাছাই ও বাতিল-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার সময় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তখন এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর জিয়াউর রহমানসহ সবার খেতাব ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা।
অপরাধের জন্য জিয়াউর রহমান শাস্তি পাবে জানিয়ে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অনেকেরই পুরস্কার ও ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ দেওয়া যাবে, অপরাধের জন্য তারা শাস্তি পাবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যদের হাতে সপরিবারে খুন হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। এরমধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র ও নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থায় করছেন।
এছাড়া শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল রশীদ, মুসলেহউদ্দীন রিসালদার বিভিন্ন দেশে পালাতক রয়েছেন।বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় জিয়াউর রহমান নেপথ্যে থেকে উৎসাহ যুগিয়েছেন বলে দাবি করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।