প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১২
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টিএফআই-জেআইসি সেলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার সকালে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল চত্বরে তাদের হাজির করা হলে আদালত এই নির্দেশ দেন। আদালতের এই আদেশের পর ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া এই ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম ও খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সক্রিয় থাকা টিএফআই-জেআইসি সেলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, দুটি মামলায় মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।
প্রথম মামলায় ১৭ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলাতেই শেখ হাসিনার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব মামলার তদন্তে টিএফআই-জেআইসি সেলের বিভিন্ন সময়ে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড, নিখোঁজ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তারা হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেজর জেনারেল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, কর্নেল মশিউল রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লে. কর্নেল মখচুরুল হক (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার এবং কর্নেল কেএম আজাদ।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার আগে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা জামিনের আবেদন করেন। তবে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আবেদনটি নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত জানিয়েছে, প্রাথমিক শুনানির পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন নিয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
এই ঘটনাকে ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন হাইকোর্ট মাজারগেট, মৎস্য ভবন, কাকরাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, তদন্ত সম্পন্ন হলে পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাগুলো নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।