প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২৬
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী মতাবলম্বীদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (৮ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং লেখকসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের গুম ও নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। শুনানি শেষে গুম সংক্রান্ত দুটি মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলে অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।
আরেক মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (জেআইসি) সংশ্লিষ্ট গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের একাধিক সাবেক মহাপরিচালক, লে. জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, এদের মধ্যে চারজন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকলেও সংশোধিত আইনের আলোকে তারা আর কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে শতাধিক মানুষ গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো খোঁজ মেলেনি। বহু পরিবার বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করলেও তাদের স্বজনদের আর ফিরে পাননি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
প্রসিকিউশন বলছে, র্যাবের টিএফআই সেল এবং জেআইসি-তে গোপনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। তাদের অনেককে হত্যার পর মরদেহ গোপন করা হয়। এসব অপরাধ রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা থেকে বেশ কয়েকজন নিখোঁজ ব্যক্তি উদ্ধার হন। তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বীন কাশেম ও আবদুল্লাহিল আমান আযমীসহ অনেকেই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের বিবৃতির ওপর ভিত্তি করেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এ মামলাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এখন ট্রাইব্যুনালের প্রধান লক্ষ্য।