যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রথম কার্যক্রম হিসেবে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ফুলটন এলাকায় সাদা পোশাকে অভিযান চালিয়ে চারজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইস)।
এ অভিযানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন শপথ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অভিবাসন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরো এলাকায় সাদাপোশাকে অফিসাররা অভিযান চালিয়ে চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এ ঘটনায় নিউইয়র্কে অভিবাসী বিষয়ক আইন কর্মকর্তা খাদিজা মুনতাহা রুবা জানান, এই চার বাংলাদেশি ফুলটন এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন, যখন সাদাপোশাকে আইস অফিসাররা এসে তাদের পরিচয়পত্র চেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে একজন প্রতিবাদী অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সংশোধনী উল্লেখ করে নিজের পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এর ফলস্বরূপ, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে, একই এলাকায় আরও তিনজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এই গ্রেপ্তারের পর, স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০ জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনে শপথ নেওয়ার সময় সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার মতে, লাখ লাখ অভিবাসী সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে, এবং তাদের প্রথমে প্রবেশ বন্ধ করা হবে এবং তারপর অপরাধী অভিবাসীদের বহিষ্কার করা হবে।
এছাড়া, মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসন সীমান্তে ভ্রমণ ও অভিবাসন ব্যবস্থা আরও কঠোর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পও বন্ধ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়া হয়।
এদিকে, ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধানও বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে, ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা আর নাগরিকত্ব পাবে না। তবে, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪টি অঙ্গরাজ্য ও শহরের কর্তৃপক্ষ একযোগে মামলা করেছে।
নতুন নির্বাহী আদেশের পর, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব ও আইনগত অবস্থান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা হলেও, অনেক মানবাধিকার সংগঠন ও অভিবাসী অধিকার কর্মীরা এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপের ফলে অভিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং এটি দেশের সামগ্রিক জনগণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়া, ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে আরও কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে, অনেক মার্কিন নাগরিক এবং রাজনৈতিক নেতারা এসব পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, এটি দেশের নিরাপত্তা এবং শ্রম বাজারের স্বার্থে সহায়ক হবে।
ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করে তোলার পাশাপাশি, বৈদেশিক সম্পর্কেও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। বিশেষত, মেক্সিকো সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করে এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
এদিকে, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন মামলা করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আইনি লড়াইয়ের পথে নিয়ে যাবে। এটি মার্কিন অভিবাসন আইন এবং এর প্রয়োগ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু করতে পারে, যা শুধুমাত্র অভিবাসীদের জন্যই নয়, পুরো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অধিকার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আরও আলোচনা এবং পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।