প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৩, ১:২৮
বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে টানা তিনদিন মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে। এতে নদীর তীরের জনপদ, চরাঞ্চল দুই-তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আর জলাবদ্ধতায় নাকাল বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাসুদুর রহমানের দেওয়া তথ্যমতে, বরিশাল নগরীতে গত শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল রবিবার ৩টা পর্যন্ত ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান খালগুলো প্রায় ভরাট এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে সমস্যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং তা সমাধাণে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জলাবদ্ধতায় নাকাল ভুক্তভোগীরা বলছেন, জোয়ারের পানিতে তাদের ঘরে পানি ঢুকছে, রাস্তা ঘাট ডুবে যাচ্ছে। এতে করে চলাচলের যোগ্য সড়ক ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শনিবার বিকালের পর থেকেই কীর্তনখোলার পানিতে বরিশাল নগরী ও নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া, রসুলপুর, পলাশপুর ৩, ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটিখানা, সাগরদী, ধান গবেষণা রোড, জিয়ানগর, ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড, স্টেডিয়াম কলোনি নগরীর সদর রোড, নগরীর মাইনুল হাসান সড়ক, বগুরা রোডের একাংশ, বটতলার একাংশ, আমির কুটির এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পানিতে তলিয়ে রয়েছে এলাকাগুলো। বৃষ্টির সাথে কীর্তনখোলার সঙ্গে যুক্ত ড্রেন দিয়ে এসব এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীর এলাকাবাসি জানান, সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার ২০ বছর পরও একই অবস্থা। এই সময়ের মধ্যে চারজন মেয়র দায়িত্ব পালন করলেও তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দায়িত্বে ছিলেন একাধিক সংসদ সদস্যও। কিন্তু যেই জোয়ারের পানিতে মানুষ দুর্ভোগে ছিল সেই দুর্ভোগেই রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, গত চার দিন ধরে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ফুটের বেশি উচ্চতায় পানি থাকে। দুটি ওয়ার্ডের তিন কিলোমিটারের এলাকাবাসী এ পানিতে জিম্মি। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধিকে দেখলাম না খবর নিতে।
খ্রিস্টান পাড়ার তাপস বলেন, এ পানি প্রতি বছর উঠছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যায়। এখন কীর্তনখোলা নদীর পানির বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার নিচু এলাকা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ওই সময় ঘর থেকে বের হতে হলে তিন ফুট পানিতে পা চুবাতে হয়। এরপর গন্তব্যে গিয়ে আবার পানি পেরিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে হয়। তবে এ সময় সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে আমাদের ছেলেমেয়েরা। তারা কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হতে পারে না। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় এমপি, মেয়র এবং কাউন্সিলরকে জানালেও আশ্বাসে ঘুরপাক খাচ্ছে সমাধান। এখন আমাদেরও সহ্য হয়ে গেছে। এ কারণে কারও কাছে কিছু বলি না।
নগরীর ধান গবেষণা এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কীর্তনখোলার পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে এ সমস্যা বড় আকার ধারণ করে। তবে প্রতি বছর বর্ষাকালের স্বাভাবিক দিনগুলোতেও পানিতে প্লাবিত হয় ধান গবেষণা এলাকার সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি। পানি সরানোর জন্য ড্রেন নেই। ড্রেন থাকলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রয়েল ও ফরিদ আহমেদ বলেন, কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সড়ক উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ করে সাগরদী খালের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এতে করে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে উঠলেও ওইসব এলাকায় পানি প্রবেশ করবে না। অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
ড্রেনের মুখ ময়লায় আটকে যাওয়ায় নগরীর কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি নামছে না স্বীকার করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনের সংযোগ মুখ ও খালগুলো পরিস্কার করার কার্যক্রম চলছে।
নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘শপথ গ্রহণের পর বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে সমস্যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা নগরীর বেশ কিছু এলাকায় রয়েছে। স্থানীয় এমপিকে সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। আমি শুধু আশ্বাস দিই না, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরবাসী তা বুঝতে পারবে। যে ওয়াদা করেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে নজির স্থাপন করব।