বরিশালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একাধিক ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে কয়লার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বরিশালের অধিকাংশ ইটভাটার মালিকপক্ষ পুরাতন সনাতনী পদ্বতি ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ছে। এতে একদিকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ, অন্যদিকে ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক ফলের গাছ মরে যাচ্ছে।
এ সকল অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রায়শঃই অভিযান চালিয়ে জড়িমানা ও ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই পুনরায় ভাটা চালু করছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগীদের দাবী, লোকলয়ের ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি সরকারের বেধে দেয়া শর্তাবলী শতভাগ পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল করা হোক। অপরদিকে নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৩০০টির উপরে ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে জিগজ্যাক প্রায় ২০০টির মতো এবং পুরাতন ফিক্সড পদ্ধতি ২৮টি ও পুরাতন সনাতনী পদ্বতি নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। যার হিসাব বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে নেই বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। বরিশাল জেলায় প্রায় ২০০টি জিগজ্যাগ ইট ভাটার ১০৩টির পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে আর বাকি ৭৬টির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। যেসব ইটভাটার ছাড়পত্র নেই এসব ইটভাটা বছরের পর বছর চলছে বরিশাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সরকার ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) আইন জারি করেছে। আইনে রয়েছে কোন ইট ভাটা স্থাপন ও ইট পোড়তে হলে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। এছাড়া ইট পুড়তে জ্বালানী কাঠ ব্যবহারের পরিবর্তে কয়লা দিয়ে পোড়ার বিধান রয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামে মেসার্স আশার আলো, মেসার্স জে.এ.বি ব্রিকস, পরমানন্দসাহা গ্রামে মেসার্স হাজী ব্রিকস, কালিরবাজার গ্রামে এবিএস ব্রিকস, রাখালতলা গ্রামে এসবিআই ব্রিকস, বাবুগঞ্জে ফাইন ব্রিকস, রাজ ব্রিকস, নিশা ব্রিকস, বন্দর থানার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরকরনজী গ্রামে গড়ে ওঠা মেসার্স খান ব্রিকস, রানীর হাট সংলগ্ন মেসার্স নিপা ব্রিকস এবং মেসার্স আরএইচবি ব্রিকস, মেহেন্দিগঞ্জে মেসার্স ধনিয়া ব্রিকস, মেসার্স ওয়ান ব্রিকস, মেসার্স নাম্বার ওয়ান ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, বাকেরগঞ্জে পান্ডব নদীর চরে একতা ব্রিকস, শাপলা ব্রিকস, দুবাই ব্রিকস, গাজী ব্রিকস, আমতলী গ্রামে মেসার্স টু স্টার ব্রিকস, বাগদিয়া গ্রামে মেসার্স এইচ এন্ড এইচ ব্রিকস এবং নলুয়া গ্রামে মেসার্স ওয়ান নিপা ব্রিকস সহ বেশকিছু ইটভাটায় নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন কয়েকশ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কিছু ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রাম চিমনি। এসব ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এতে ভাটার আশপাশের এলাকা সব সময় বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের বাড়িগুলোর অনেক গাছ মরে গেছে। নারিকেল, সুপারি গাছে ফুল থেকে ফল ধরার কয়েক দিন পর তা ঝরে পড়ছে। অন্যান্য ফল গাছেরও একই অবস্থা। এসব ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেন না ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিই নয়, অনেক ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের জমি থেকেও মাটি কেটে নেয়া হয়। তারা আরো জানান, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদফতর থেকে একাধিকবার এসব অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো হয়।
এদিকে ভাটা মালিকদের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন, ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেছি। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা কিছুদিন আগে ভাটা পরিদর্শন করে গেছেন। এখনো ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আবেদন যখন করেছি, তখন অনুমোদন পাওয়া যাবে এমন আশায়-ই তারা ভাটা চালু করেছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোঃ আবদুল হালিম বলেন, বরিশালের অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে অনেক অবৈধ ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই বড় ধরণের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।