বাগদাদির প্রত্যাগমনই প্রমান করে তিনি ইহুদিদের নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৫ই মে ২০১৯ ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
বাগদাদির প্রত্যাগমনই প্রমান করে তিনি ইহুদিদের নেতা!

বিভিন্নমুখী সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর আইসিসের ইসলামিক স্টেট এখন ভূমিহীন খেলাফত। হাজার হাজার আইসিস যোদ্ধা ও জঙ্গি নিহত অথবা গ্রেফতার হয়েছে। এত যুদ্ধের পরেও সুস্থ ভাবে বেঁচে আছেন আইসিস দলপতি স্বঘোষিত খলিফা আল বাগদাদি। বহুদিন কোন অচিন আলীবাবার গুহায় নিজেকে গুপ্ত রেখে আইসিসের পতনের পরে তিনি চিচিং ফাকের মত আবির্ভুত হয়ে একটি ভিডিওতে হাজির হলেন। দাবি করলেন তিনি জীবিত, সুস্থ এবং ঘোষণা দিলেন তিনি তার যোদ্ধাদের হত্যার প্রতিশোধ নিবেন।ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের অত্যচারের প্রতিশোধ নেয়ার কথা তার বক্তৃতায় তিনি বলেননি। ভিডিওটিতে তার বসার আর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে বোঝা যায় তিনি মুসলিম সংস্কৃতির নন। দ্বীনি কথা বলার সময় খাঁটি দ্বীনদার আলেমগণ সুন্নত অনুযায়ী নামাজের আত্তাহিয়াতুর ভঙ্গিতে বসেন। এমনকি বিন লাদেনও সুন্নতি স্টাইলে মাটিতে বসতেন।

বাগদাদির মাথায় ফেলে রাখা কালো কাপড়ের টুকরার সাইজ এবং যেভাবে তা মাথার ওপরে ফেলে রাখা হয়েছে তা মুসলিম আলেমরা যেভাবে সাদা রুমাল মাথায় রাখেন দুই কান ঢেকে এটি সেরকম নয়; পাইরেট অব ক্যারিবীয়নের মতো কোনোভাবে যেন ফেলে রাখা হয়েছে ফটোসেশনের জন্যে। বামহাতের শাহাদাৎ আঙ্গুলি উঁচিয়ে কোন মুসলমান আল্লাহর কথা, দ্বীনের কথা বলেনা। প্র্যাকটিসিং মুসলমানরা প্রয়োজনীয় কর্মে বাম হাত ব্যাবহার করেনা; সেটিই হাদিসের নির্দেশ। আল বাগদাদির কর্ম ও চিন্তা বিপরীত মূখী, সে মুসলমান নয় ইহুদি বলে যে কথাটি পৃথিবীময় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে তার আসন পেতে বসার ভঙ্গিমা, মাথার রুমাল আর বাম হাতের শাহাদাৎ অঙ্গুলির ব্যবহারই যেন তা প্রমাণ করে দিচ্ছে।

ইসলাম ধর্মকে প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্যে, মুসলমান দেশগুলোকে পচানোর জন্যে আর বিশ্বব্যাপী সমস্ত মুসলমান নামওয়ালা মানুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ইসরাইল আর তার সহযোগী দেশগুলি জেহাদ প্রেমী মুসলমান তরুণদের বিভ্রান্ত করে তাদের নিজেদের সৈনিক হিসাবে ব্যবহার করার উদ্যেশ্য নিয়ে আইসিস বানিয়েছে। আইসিস অন্যদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিনই তা প্রমাণিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কার সিরিজ বোমা জঙ্গিদের ভারত সফর নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী প্রধান সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে তারা ভারতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। যদি সেনাপ্রধানের এই সন্দেহ সত্যি হয় তাহলে প্রশ্ন আসে, ভারতের মত একটা হিন্দু জনবহুল দেশে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে কোন ট্রেনিং চালানো কি মুসলমান জঙ্গিদের পক্ষে সম্ভব? আইসিস অপারেটররা কার নির্দেশে সহায়তা পেলো?

সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে ভারতের ১২টি কোম্পানি থেকে আইসিসের অস্র সরঞ্জাম যেত। সেই তথ্য আবার খুঁজে বের করেছে ভারতেরই একটি সংবাদ সংস্থা। ভারতের চৌকষ গোয়েন্দাদের নাকের ডগায় কি করে এতদিন ধরে সম্ভব হয়েছে এই অস্র চালান? কার হুকুমে তাঁরা এই চালান বন্ধ করাননি? সরকারি প্রেস ব্রিফিংয়ে শ্রীলংকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিতা সেনারত্ন গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের পূর্ববর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপ্রকাশের সরাসরি তত্বাবধানে ইসলামী আর বুদ্ধিস্ট জঙ্গিদের অর্থ যোগান দেয়া হয়। তিনি জানান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ভাই গোটাবায়া রাজপ্রকাশ যিনি একসময় রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উঁচু অফিসিয়াল ছিলেন তিনি পুরো অপারেশনটি পরিচালনা করেন। শ্রীলঙ্কার আইসিস সংগঠন তাওহীদ জামাতের সেক্রেটারী আব্দুল রাজ্জাক রফিকউদ্দীন এক সময় শ্রীলঙ্কান আর্মি ইন্টিলেজিন্সের সদস্য ছিলেন এবং তার সাথেই প্রেসিডেন্ট ভ্রাতা গোটাবায়া রাজপ্রকাশের সরাসরি যোগাযোগ ছিলো বলে মন্ত্রী সেনারত্ন কলম্বোতে সাংবাদিকদের জানান।

প্রাক্তন ডিফেন্স সেক্রেটারী প্রেসিডেন্টের ভাই গোটবায়া রাজপ্রকাশের ঘনিষ্ট ও বিশ্বাসভাজন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নার সয়জা। তিনি মুসলিম আর সিংহলি সন্ত্রাসীদের সংযুক্ত করার দায়িত্ব নিয়ে এই নাশকতা ঘটানোর জন্য তৌহিদ জামাতের সদস্যদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেন। এ সময় চূড়ান্ত পরিকল্পনার টেস্ট রান হিসাবে দুজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। বিতাড়িত প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজপ্রকাশকে ক্ষমতায় ফিরানোর পরিকল্পনায় পুরো রাষ্ট্রে একটা নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটা ব্যর্থ ক্যু'এর অংশ হিসাবে এই হোটেল, চার্চ ম্যাসাকার হতে পারে বলে মন্ত্রী সেনারত্ন কলম্বোতে সাংবাদিকদের জানান। আগেই অনুমান করা হয়েছিলো-দেশের ভিতরে কোনো শক্তিশালী অর্গানাইজড গ্রুপ ছাড়া -এরকম নাশকতাপূর্ণ কাজ করা আদৌ সম্ভব নয়, তদন্তে তাইই বেরিয়ে আসলো। এটা আলজাজিরার রিপোর্ট নয়, সরাসরি শ্রীলংকান গভর্ণমেন্টের প্রেস ব্রিফিং। অজ্ঞাত আঙুলের ইশারায় এই ব্রিফিং তেমন একটা প্রচারিত হয়নি।

বোঝা গেল, ইসলামিক জেহাদ নয়, পূর্বাপর প্রতিটি জঙ্গি আক্রমণে আইসিসকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক বা সামরিক কারণে অথবা অন্য কোন দেশের কোন বাজার নষ্ট করার মত কোন অর্থনৈতিক দুরভিসন্ধি ও শঠ পরিকল্পনা নিয়ে; যেমনটি হয়তো হয়েছিলো ঢাকার হলি আর্টিজান হামলার নেপথ্যে। বাংলাদেশের বিদেশি ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের টার্গেট কিলিং করানো হয়েছিল সম্ভবতঃ বাংলাদেশে জাপানিদের বিশাল ইনভেস্টমেন্ট বন্ধ করার উদ্যেশ্যে। এই জঙ্গি আক্রমণের পরে অনেক জাপানি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসতে চায়নি প্রায় দু বছর। বাংলাদেশে বিনিয়োগ না আসলে যারা লাভবান হয় তাদের দূরবর্তী হাতের সঞ্চালন অনুভব করা যায় ঘটনাপ্রবাহ ব্যাখ্যা করলে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জঙ্গি ছাত্রগুলি এই হত্যাকান্ডকে জেহাদ মনে করে শহীদ(?) হবার অপেক্ষা করেছিল। কি নিদারুণ নির্বুদ্ধিতা! আইসিসের ডিজাইনাররা জানে ইসলাম ধর্মে জেহাদ ফরজ আর সঠিক ধর্মযুদ্ধে শহীদ হলে সরাসরি জান্নাত যাওয়া যায়। তারা অসম্ভব চতুরতার সাথে এই কোরানিক তথ্যকে ব্যবহার করে তাদের রাজনৈতিক উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে কাটা দিয়ে কাটা তুলতে চেয়েছে। সমস্ত মুসলমান সম্প্রদায় আর ইসলাম ধর্মকে পৃথিবীর সামনে ঘৃণার বিষয় হিসাবে তুলে ধরার জন্য তারা মুসলমান তরুণদের ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বানিয়েছে।

এজন্যই তাদের প্রোগ্রামড অপারেটর দিয়ে তারা জঙ্গি আত্মঘাতী সৈনিক বানানো শুরু করেছিল। মগজ ধোলাই হয়ে পরিবর্তিত এই বিভ্রান্ত তরুণেরা অসময়ে তাদের জীবন দেয় আত্মঘাতী হয়ে, নিরীহ শিশু যুবা বৃদ্ধের জীবন নেয়। অথচ আত্মঘাতী হবার পরে তারা হয়তো জানতে পারে যে আল্লাহকে রাজি আর খুশি করার জন্যে তারা জীবন দেয়নি, তারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রভু ইসরাইল এবং সহযোগী কয়েকটি দেশের ভাড়াটিয়া সৈন্য বা আত্মঘাতী মার্সেনারী হিসাবে। আইসিস বা যেকোন জঙ্গি সংগঠনের যে অজানা বাংলাদেশি লোন উলফরা বা গোষ্ঠী যারা গোপনে সমাজে বিচরন করছেন, তারা ফিরে আসুন মানসিক সুস্থতায়, যুক্তিতে, ভাবুন, খবর নিন, পড়াশুনা করুন, বিভ্রান্ত নেতার কথা শোনা বন্ধ করুন। আইসিস এতদিন যে হত্যাকান্ডগুলি ঘটিয়েছে তাতে কি তাগুত দূর হয়েছে না হবে?

নবী (স) ইসলাম প্রচার করেছেন ভালোবাসা দিয়ে, ক্ষমা দিয়ে। মক্কা বিজয়ের পর রোমানদের মত, তাতারদের মতো পুরো শহরে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেননি, সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, অথচ তারা সবাই তখনো তাগুতের দলে ছিল। রক্ত, হত্যা তাগুতকে সরানোর পথ নয়। নিজে আমল করে নিজেকে আদর্শবান বানালেই তাগুত দূর হবে; হজরত শাহজালাল(র) এর চরিত্র দেখে যেভাবে বাংলার মানুষ মুসলমান হয়েছিলো সেভাবে নিজেকে আদর্শ বানাতে হবে। আপনাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, প্লিজ নিজ পরিবারে ফিরে আসুন সবাই, সবার মতো স্বাভাবিক মানুষ হয়ে যান। বেহেস্তে যাবার সহজ পথ ঈমান ও আমলের চর্চা করুন, মনগড়া জেহাদ এবং অন্যের বানানো পরিকল্পিত জেহাদ আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

মনে রাখবেন এটি একটি নতুন চলচ্চিত্র।

সিনেমার নাম ---- আইসিস।
অভিনেতা নায়ক---- আল বাগদাদি।
যৌথ প্রযোজনা --- ইসরাইল-ও অন্যান্য কেউ কেউ।
পরিচালনা -----আমেরিকা। 
কাহিনী ও চিত্রনাট্য --- ইবনে ইবলিশ।

এই সিনেমার কারণে আইসিস ড্রামা শেষ হবার পরেও আবার মঞ্চে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মূল অভিনেতাকে, তাই আল বাগদাদি আবার হটাৎ করে মঞ্চে সমাসীন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সাজগোজ আর ভঙ্গিমায় ভুল করে ধরা খেয়ে গিয়েছেন খলিফা অভিনেতা। সরি, তালিয়া বাজাতে পারলাম না। আল্লাহ সবাইকে সত্য বোঝার তৌফিক দিন। বাগদাদির ছবিটি প্রকাশ করেছে আজকের সৌদি দৈনিক আরব নিউজ। যদিও এটি অন্য মিডিয়ায় আগেই এসেছিল। লেখক, আরিফুর রহমান

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব