অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন সরোজ। তার পর থেকে মাকে ঘিরেই তাঁর পৃথিবী। মা জানকীর হঠাত্ মৃত্যুতে তাই সরোজের পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। এত বড় ধা্কা সামলাতে সময় লেগেছিল তাঁর। বাস্তব মেনে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। চাষবাস করে দিন গুজরান করা সরোজের হাতে টাকা ছিল না। মায়ের সত্কারের টাকাটুকুও ছিল না কৃষক ছেলের হাতে। তাই হাত পেতেছিলেন প্রতিবেশিদের হাতে। ক'টা টাকা হাতে পেলে মায়ের সত্কার করতে পারেন। কিন্তু হাত পাতাই সার হল! একজন প্রতিবেশিও সরোজের এমন দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন না। দুঃসময়ের লড়াই তাঁকে একাই লড়তে হল।
মা জানকী সিংহানিয়া বহু বছর ধরে সংসার চালাতেন। ছেলেকে একা হাতেই মানুষ করছিলেন তিনি। সরোজ ও জানকী, এই দুজনেই ছিল আস্ত সংসার। এদিন সকালে কুয়োয় জল তুলতে গিয়ে আচমকা অচৈতন্য হয়ে যান জানকীদেবী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু। ওড়িশার সুন্দরগড়ের ঘটনা। খবরটা শুনে প্রথমে দিশেহারা হয়ে যান সরোজ। প্রতিবেশিদের কাছে সাহায্যের আশায় বেরোন নাবালক সরোজ। কিন্তু পাড়ার 'নিচু' জাতের ছেলেকে এমন সময় সাহায্য করত চাননি কোনও প্রতিবেশি। বাধ্য হয়ে মায়ের মরদেহ সে তুলে নেয় সাইকেলে। প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের জঙ্গলে জানকীদেবীকে এভাবেই নিয়ে যায় তাঁর ছেলে সরোজ। প্রতিবেশিরা হা করে দেখেন।
কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। পথে অবশ্য অনেকে কৌতুল ভরে তাঁকে অনেক প্রশ্ন করেছে। কিন্তু সাহায্য কেউ করেনি। চোখের জল মুছতে মুছতে মায়ের দেহ সাইকেলে চাপিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে হাঁটতে থাকে সরোজ।বছর দুয়েক আগে দানা মাঝি নামে এক চাষীর মর্মস্পর্শী ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। মৃত স্ত্রীর দেহ তাঁরই কাপড়ে মুড়ে দশ কিমি রাস্তা হেঁটেছিলেন তিনি। পিছনে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছিল তাঁর মেয়ে। এবার সরোজ। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাতের নাগপাশ ছাড়িয়ে দেশ যে এখনও বেরোতে পারেনি, আরও একবার তা প্রমাণ হয়ে গেল।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।