প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১০
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটিতে আবারও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরটিতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ইসরাইলি বিমান হামলায় শহরের বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির আল-ঘাফরি হাইরাইজ নামের সর্বোচ্চ আবাসিক ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। তীব্র বোমাবর্ষণে শহরের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ অভিযোগ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাত করতে ইসরাইল অপ্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের বরাত দিয়ে জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৫০টি বহুতল ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। কেবল জায়তুন এলাকায় আগস্টের শুরু থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। শহরের অন্যান্য এলাকাও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যদিও এসব ভবন হামাসের নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন প্রমাণ প্রকাশ করেনি তারা। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার ভিডিও প্রকাশ করে লিখেছেন, সন্ত্রাসের টাওয়ার ধ্বংস হয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাতে সাংবাদিকদের প্রাণহানিও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- প্রতিবেদক মোহাম্মদ আল-কুইফি, ফটোগ্রাফার আইমান হানিয়ে এবং সাংবাদিক ইমান আল-জামিলি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, এটি সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক হামলায় ছয় বছর বয়সি যমজ শিশু সহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। অনেক মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
গাজা সিটির সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র সব জায়গা বারবার হামলার শিকার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান ধ্বংসযজ্ঞে শহরের বাসিন্দারা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সংকটে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ফিলিস্তিনিদের দাবি, এই হামলা কেবল তাদের ভূমি থেকে উৎখাতের একটি পরিকল্পিত ধাপ। গাজার সর্বশেষ সহিংসতায় এ অঞ্চলের মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।