আততায়ীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৮ই জুলাই ২০২২ ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
আততায়ীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানলেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। নিজের দেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময়েই তাঁর দিকে ছুটে এল প্রাণঘাতী গুলি। যদিও তিনি একা নন। শিনজো আবে-র মতোই এমনভাবে আততায়ীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। শুনে নেওয়া যাক তাঁদের কথা।


রাজনৈতিক ক্ষেত্রের টানাপোড়েন অনেক সময়েই ছাপ ফেলে নেতৃত্বদের ব্যক্তিগত জীবনেও। আর তার জেরেই কখনও কখনও ঘটে তাঁদের প্রাণহানির মতো ঘটনাও। এমনই একাধিক ঘটনার সাক্ষী দেয় বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস, যেখানে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আততায়ীর আকস্মিক হামলা। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র মৃত্যু পৃথিবীকে আরেকবার সেই ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল।


বস্তুত এমনই এক হত্যার জেরে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ সালে সার্বিয়ায় বেড়াতে এসে আততায়ী হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ার ভাবী রাজা। আর সেই ঘটনাই ক্রমে বিশ্বজুড়ে ঘনিয়ে তুলেছিল এক মহাযুদ্ধ। তবে বাকি পৃথিবীর থেকে চোখ সরিয়ে এ দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসেও এমন অঘটনের সংখ্যা কম নয়। আততায়ীর হাতে নিহত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে মহাত্মা গান্ধীর নাম। জাতির জনক হিসেবে সর্বজনমান্য এই মনীষী দেশের স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পরেই, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সারা বিশ্বের কাছে যিনি অহিংসার প্রতীক বলেই পরিচিত, নাথুরাম গডসের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ছোঁড়া তিনটি গুলি তাঁর প্রাণ কেড়ে নেয়।


একই নিয়তির বলি হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর ডান হাত জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী। রাজনৈতিক পরিচয়ে যিনি ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। অপারেশন ব্লু স্টার-এর সময় স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযান চালানোর প্রতিশোধ নিতে ইন্দিরাকে হত্যা করেছিলেন তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষী, সৎবন্ত সিং এবং বিয়ন্ত সিং। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর উনিশটি বুলেটের আঘাত নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ইন্দিরা।


ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র তথা দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামও এই তালিকায় উঠে আসে আর কয়েক বছর পরেই। ১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুর কংগ্রেস প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন রাজীব। সেখানেই এলটিটিই জঙ্গী তেনমোঝি রাজারত্নমের আত্মঘাতী বোমার হামলায় নিহত হন তিনি।


মহাত্মা গান্ধীর মতোই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। সেই কারণেই তাঁর প্রাণ কেড়েছিল আততায়ীর গুলি। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল নিহত হন আমেরিকার সমানাধিকার আন্দোলনের এই কিংবদন্তি নেতা। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় একশো বছর আগে বৈষম্যের প্রতিবাদ করেই নিহত হয়েছিলেন আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। কুখ্যাত দাসপ্রথার অবসান ঘটেছিল তাঁর হাত ধরেই। বিরোধীদের রোষে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল থিয়েটারের মধ্যে নিহত হন এই জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতা। আমেরিকার আরেক বিখ্যাত রাষ্ট্রনেতা, জন এফ কেনেডির মৃত্যুও ঘটেছিল আততায়ীর হাতেই। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।


শেষ করা যাক ২০০৭ সালে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ড দিয়ে। সে বছরের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে আততায়ীর হাতে মৃত্যু হয় পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেত্রী বেনজির ভুট্টোর। নিজের দেশেই নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন এই নেত্রী।


শুধু এই রাজনৈতিক নেতৃত্বরাই নন। রাশিয়ার শেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস, কঙ্গোর প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা, ইরানের সেনাবাহিনীর শীর্ষনেতা কাসেম সোলেইমানি, এমন অনেকেই রয়েছেন এই তালিকায়। কোনও আততায়ীর হামলা আকস্মিকভাবেই প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের। আর তার অভিঘাত নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকেই।