আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশ ছেড়ে যাওয়া বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার রাতে শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড তাজ হোটেলে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ৯০ দশকের আলোচিত সাংবাদিক এবং বাংলা লন্ডন চ্যানেলের সম্পাদক আব্দুর রব ভুট্টো বলেন, “গত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত ছিল। আওয়ামী দুঃশাসনে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। সরকারের অন্যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরলেই ভয়াবহ নিপীড়ন, জেল-জুলুম এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়েছে। অনেক সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। আমি নিজেও খুনি হাসিনার রোষানলে পড়ে ১৫ বছর লন্ডনে প্রবাসী জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা ব্রিটিশ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আমাকে তিনবার হয়রানি করেছেন। লন্ডনে থাকার সময় পরিবারের সদস্যদের কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমার মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ীর মৃত্যুতে শেষ দেখাও করতে পারিনি। তবে সব বাধা সত্ত্বেও আমি কলম থামাইনি।”
সভায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী তার বক্তব্যে বলেন, “জুলাই-আগস্টের বিপ্লব না হলে আমি আজ দেশে ফিরে আসতে পারতাম না। আওয়ামী শাসনামলে শুধু আমাকে নয়, আমার পরিবারকেও অমানবিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে। করোনা মহামারীর সময় বিএনপি’র পক্ষে ত্রাণ বিতরণের কারণে সন্ত্রাসী হামলা, মিথ্যা মামলা এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চলেছিল। আমার স্ত্রী ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, সেদিন তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে বাধা দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের পেশাগত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হাই ডনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দৈনিক খোলা কাগজের নির্বাহী সম্পাদক মো. মনির হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক ইসমাইল মাহমুদ, আহমেদ ফারুক মিল্লাদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন এবং অন্যান্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
আব্দুর রব ভুট্টো তার বক্তব্যে সাংবাদিক ইদ্রিস আলীর প্রতি অন্যায় ও অগঠনতান্ত্রিক আচরণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “তৎকালীন শাসনামলে তার প্রতি অন্যায় করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু আল্লাহ ন্যায় বিচারক। আজ দেশে হাসিনা বিতাড়িত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অনেক ত্যাগে অর্জিত এই স্বাধীনতা যেন আবার হাতছাড়া না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা সকল ভেদাভেদ ভুলে এক প্লাটফর্মে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় শ্রীমঙ্গলের কর্মরত সকল গণমাধ্যম কর্মীরা একাত্মতা প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।