সরিষার তেলের অসাধারণ কিছু গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: সোমবার ৮ই এপ্রিল ২০১৯ ১২:৩৪ অপরাহ্ন
সরিষার তেলের অসাধারণ কিছু গুণ

ব্যস্ত কাজের ফাঁকে ছোটখাটো দরকারে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় অপ্রতুল হয়ে ওঠে। এ রকম অবস্থায় আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা জিনিসের গুণাগুণের উপর নির্ভর করে থাকি। ছোটখাটো টোটকা যে কতোটা কার্যকরী হতে পারে তা তখনই বুঝতে পারি। আমাদের আজকের দিনে ডাক্তার বদ্যি এতটা সহজে পেয়ে গেলেও আগের দিনে ডাক্তার পাওয়া এতটা সহজ ছিল না। তাই আগেকার দিনে এ রকম টোটকাতে পুরনো দিনের মানুষেরা নির্ভর করতেন। কম বেশি আমাদের সবার বাড়িতেই বর্তমানে বা কোনও সময় পুরনো দিনের মানুষ আছেন বা থাকতেন। তাদের মুখে আমরা অনেকেই শুনেছি। আজ সে রকম একটা জিনিসের গুণাগুণ বলবো যা আমাদের সবার বাড়িতেই পাওয়া যায়। বলা ভালো সবার বাড়ির হেঁসেলে সে জিনিস থাকে। রান্না করার জন্যে অপরিহার্য সেই জিনিস হলো সরিষার তেল। এর গুণ যেমন রান্নার ক্ষেত্রে রয়েছে, তেমনি প্রতিদিনের অনেক ছোটখাটো সমস্যাতে এর প্রয়োগ আছে। তাহলে সময় নষ্ট না করে আসুন জেনে নিই সরিষার তেলের অপরিহার্য পাঁচটা গুণ।

ত্বকের জন্যে
সরিষার তেলে থাকে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান যা আমাদের ত্বকের জন্যে খুব উপকারী। এর মধ্যে আছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং পরিমাণ মতো ভিটামিন এ। ফলে বুঝতেই পারছেন সরিষার তেল ত্বকের ভালো হওয়ার জন্যে কতটা দরকারী। সে আপনার ত্বকের ব্রণ হোক বা ট্যান পড়া, সব ক্ষেত্রেই সরিষার তেল কাজে দেবে। অল্প পরিমাণে সরিষার তেল হাতে নিয়ে ভালো করে ম্যাসেজ করুন আপনার ট্যান পড়া জায়গায়। তারপর তুলা পানিতে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে মুছে নিন। কিছুদিনের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো উপকার দেখতে পাবেন।

অনেকেই আছে যারা মুখের কালো দাগ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অনেকে ব্রণের জন্যে চিন্তিত। ব্রণ কমে গেলেও দাগ থেকে যায়। এর সহজ সমাধান আছে। দু’চামচ সরিষার তেল নিয়ে তার মধ্যে এক চামচ নারকেল তেল মেশান। এর মধ্যে এক চামচ লেবুর রস আর দু’চামচ টক দই দিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে মুখে মাখুন। মিনিট দশেক পর ধুয়ে ফেলুন। শুধু দাগ যাবে না, সঙ্গে মুখের জেল্লা বাড়বে।

আর্থ্রাইটিসের উপশমে
আমাদের চেনা পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা এই রোগে ভুগছেন। ব্যাথায় অনেকেই জর্জরিত। পেইনকিলার নিয়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন। এর থেকে নিরাময়ের জন্যে একবার এই অতি পরিচিত তেলের উপর বিশ্বাস করে দেখতে পারেন। সরিষার তেল আর আদা এই দুটিতেই এমন উপাদান থাকে যা প্রদাহজনিত উৎসেচকের ক্রিয়ার গতি কমিয়ে তোলে। ফলে ব্যাথার থেকে আরাম পাওয়া যায়। জয়েন্টের ব্যাথার হাত থেকে নিরাময় পেতে সরিষার তেলে পরিমাণ মত কর্পূর মেশান। তেলটা গরম করে ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার সেই তেল দিয়ে মালিশ করুন। আরাম পাবেন।

হার্টের সুরক্ষায়
আজকাল ডাক্তাররা তেল খেতে বারণ করেন যাদের হার্টের সমস্যা আছে। অনেকে বিকল্প হিসেবে নারকেল তেল বা সোয়াবিন তেল বা অলিভ তেল দিয়ে রান্না করেন। তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে কিন্তু সরিষার তেল এই সব তেলের থেকে অনেকটাই ভালো। এতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে তোলে।

রক্ত ঠিক রাখে
সরিষার তেল আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এবং যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় তার দিকে নজর রাখে। ফলে শরীর ঠিক থাকে এবং আমাদের শরীরের সারাদিনের ক্লান্তি ভরা পেশি গুলোকেও উজ্জীবিত এবং সবল রাখে। একইসঙ্গে এই তেল শুধু আমাদের কোলেস্টেরল কমায় না, সঙ্গে লোহিত রক্ত কণিকার গঠনে ভূমিকা রাখে।

ঠাণ্ডা থেকে বাঁচায়
ছোটখাটো ঠাণ্ডা আমাদের সবারই লাগে। তার জন্যে আমরা কেউ ডাক্তারের কাছে যাই না। সরিষার তেল এই ঠাণ্ডা লাগলে কষ্ট থেকে বাঁচায়। দুই হাতে তেল নিয়ে ভালো করে বুকে ম্যাসেজ করুন। আরাম তো পাবেন সঙ্গে বুকের জমা কফ বেরোতে বা কমতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে বন্ধ নাক খোলার জন্যে এক বাটি পানি নিয়ে কোয়েল ফোঁটা সরিষার তেল ফেলুন। এবার পানি একটু গরম করে তার ভাপ নিন। দেখবেন বন্ধ নাক খুলে গেছে। ছোটো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সরিষার তেল দিয়ে এই বুকে বা পায়ের তলায় মালিশ খুবই কার্যকরী।

ইনিউজ ৭১/এম.আর