দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, তবে তেলের উৎপাদন ও সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। স্থানীয় বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, বিশেষ করে ৫ লিটারের বোতলটি প্রায় অদৃশ্য। এতে ক্রেতারা খোলা তেলও অতিরিক্ত দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক বাজারে চাল, ডাল এবং আটা কেনার শর্তে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক মাসে এই সংকটের প্রেক্ষাপটে, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দেশের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠক করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে, বাজারে সরবরাহের কোনো সংকট নেই। বরং আগের চেয়ে বেশি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সিটি গ্রুপ জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে তারা ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি।
অন্যদিকে, মেঘনা গ্রুপও জানুয়ারিতে ৪৭ হাজার ৬৬৮ টন তেল সরবরাহ করেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এভাবে অন্যান্য কোম্পানির তথ্যও একই ধরনের প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখাচ্ছে। জানুয়ারি মাসে সরবরাহের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।
বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর কথা বললেও, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যে, কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মজুত করে রেখেছেন এবং খুচরা বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী দেশে ভোজ্যতেলের মূল্য বেশি হওয়ায় পাচারের আশঙ্কাও রয়েছে।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভোজ্যতেলের আমদানি ৩৫ শতাংশ বেড়েছে এবং ঋণপত্রের পরিমাণও একই হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বাজার তদারকির অভাবে ভোজ্যতেল নিয়ে এই সমস্যাগুলো ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। ভোক্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টির কারণে তারা অস্বস্তিতে আছেন, কিন্তু সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই সংকট আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে দূর হবে। পাশাপাশি, রমজান মাসের আগে ছোলা, বুট, খেজুর, ডাল, চিনির দাম অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই এবং এ পণ্যের সংকটও নেই বলে তিনি জানান।
এখনো পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজারে সৃষ্ট এই অরাজকতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ভোক্তাদের সমস্যার অবসান হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।