জাতিসংঘের তদন্তে উঠে এলো নির্বিচার হত্যার ভয়াবহ চিত্র, স্বাগত জানিয়েছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫৮ অপরাহ্ন
জাতিসংঘের তদন্তে উঠে এলো নির্বিচার হত্যার ভয়াবহ চিত্র, স্বাগত জানিয়েছে সরকার

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) গত বছরের (২০২৪) জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে তৎকালীন সরকার কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে।


জাতিসংঘের এই তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ওএইচসিএইচআরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "আমি অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত সব ব্যক্তি এবং কোটি কোটি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।"


জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠন যৌথভাবে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল।


প্রতিবেদনের মূল তথ্য:

🔹 ১,৪০০ জন নিহত, যাদের বেশিরভাগই মিলিটারি রাইফেল ও প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানের গুলিতে মারা গেছেন।

🔹 ১১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ গ্রেপ্তার এবং আটক করা হয়।

🔹 নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল।

🔹 বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক শারীরিক নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হয়, যার ফলে অনেকে স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয় ও নির্দেশনাতেই এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।


অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের এই তদন্তকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বলে প্রশংসা করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "এই তদন্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখতে পেল, কী ভয়াবহ দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল পূর্ববর্তী সরকার।"


অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলবে।


জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এই নৃশংস দমন-পীড়নের আন্তর্জাতিক তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করতে হবে এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।