অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ সেলগুলো পরিদর্শন করেছেন। এরপর তিনি র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টারে যান।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আয়নাঘর পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তিনি এসব স্থাপনা পরিদর্শনে যান। ১৯ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, তদন্ত কমিশন একটি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনা ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের যেখানে আটকে রাখা হতো, সেই স্থাপনাগুলোই আয়নাঘর নামে পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়। অন্য এক তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ৩৪৪ জন গুমের শিকার হন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা সাধারণত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন না। ধারণা করা হয়, এদের অনেকেই আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা ও মীর আহমদ বিন কাসেমসহ আরও অনেকে এখানে আটক ছিলেন।
সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে গোপনে তুলে নিয়ে বিশেষ স্থানে আটকে রাখত। এসব স্থাপনাই পরবর্তীতে আয়নাঘর নামে পরিচিত হয়। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার পর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।
ফিরে আসা ব্যক্তিরা তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ না করলেও, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আয়নাঘরে আটকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হতো। অনেকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। এসব তথ্য সামনে আসার পর তদন্ত কমিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, গুমের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ তদন্ত চালানো হবে। তিনি বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটানো সরকারের অগ্রাধিকার। তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে তথ্য বিনিময়ের আহ্বান জানান।
গুমের ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা চলছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। বর্তমান সরকার এসব ঘটনার প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।