শুক্রবার রাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের পর তার ডান পায়ের নতুন ট্যাটুর ছবি ধরা পড়ে ক্যামেরায়। ট্যাটুতে দু’হাতে ধরে থাকা বিশ্বকাপ। পাশে লেখা কাতার ২০২২। যেন বিশ্বকাপ জিতবেন সেই বার্তাই দিয়ে রেখেছেন!
আর বাকি মাত্র দু’টি ম্যাচ। জিতলেই ডিয়েগো মারাদোনা কীর্তি স্পর্শ করবেন আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি। রেফারিং নিয়ে ক্ষোভের মধ্যে লক্ষ্যে স্থির মেসি। কোচ লিওনেল স্কালোনি বিশ্রাম দিলেও জিমে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন তিনি।
কাতারে ঝোড়ো হাওয়া শুক্রবার রাত থেকেই বইতে শুরু করেছিল। শনিবার সকালে এক পশলা বৃষ্টির পরে তাপমাত্রার পারদ অনেকটাই নেমে গিয়েছে। মেঘলা আকাশ ও ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের আমেজ। যদিও আর্জেন্টিনার অন্দরমহলে নেদারল্যান্ডস ম্যাচের স্পেনীয় রেফারিকে নিয়ে ক্ষোভ কমার কোনও লক্ষণই নেই। ফুটবলার, টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য থেকে আর্জেন্টিনীয় সাংবাদিক প্রত্যেকেই রীতিমতো ফুঁসছেন।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে আর্জেন্টিনার রিকভারি সেশন ছিল। এ দিন দুপুর দেড়টা থেকেই সাংবাদিকদের ভিড় জমতে শুরু করে দেয়। শুক্রবার রাতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে উঠে মেসিরা কতটা ফুরফুরে রয়েছেন, দেখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। গোল পোস্টের পাশে সারি দিয়ে দাঁড় করানো রয়েছে এক্সারসাইজ় বাইক। আলোচনা শুরু হয়ে গেল, তা হলে কি মেসিরা বল নিয়ে অনুশীলনের বদলে শুধু ফিটনেস ট্রেনিং করবেন?
শনিবার সকালেই ফুটবলার ও কোচের পরিবারের সদস্যরা চলে এসেছিলেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে। একসঙ্গে সকলে মধ্যাহ্নভোজও করেন। আর্জেন্টিনীয় সাংবাদিকরা ভেবেছিলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়েই সম্ভবত অনুশীলন করতে আসবেন ফুটবলাররা। তাই অন্যরকম ছবি তোলার আশায় গেটের সামনে ভিড় করলেন ফটোগ্রাফাররা। কিন্তু অপেক্ষাই সার হল, আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির দেখা আর পাওয়া গেল না। বাকি ফুটবলাররা একাই এলেন অনুশীলন করতে।
বিকাল তিনটার পরে রিওনেল স্কালোনি সহকারীদের নিয়ে মাঠে নামলেন। সহকারীদের নিয়ে মাঠে নামলেন। মিনিট পাঁচেক পরে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন অ্যাঞ্জেল ডি-মারিয়া, পাপু গোমেসরা। এমিলিয়ানো মার্তিনেস-সহ বাকি গোলরক্ষকদের নিয়ে স্কালোনি চলে গেলেন পাশের মাঠে। জানা গেল, একঘেয়েমি কাটাতে গোলরক্ষকরা ‘ফুট টেনিস’ খেলবেন।
হঠাৎ মাঠের ধারে সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। দুর থেকে দেখা গেল ড্রেসিংরুমের দরজা একটু খুলে কেউ একটু মুখ বার করলেন। মেসি কি? মুহূর্তের মধ্যে ক্যামেরার শাটারের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠল চারপাশ। একটু পরেই বোঝা গেল, মেসি নন, আর্জেন্টিনা মেডিক্যাল টিমের এক সদস্য দরজা খুলে দেখছিলেন, ফুটবলাররা তার নির্দেশ মেনে ঠিক মতো অনুশীলন করছেন কি না। ফের হতাশা নেমে এল। খোঁজ শুরু হল মেসি কোথায় গেলেন? আর্জেন্টিনার টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্মীকে দেখতে পেয়েই ছুটলেন সকলে। তিনি বললেন, মেসির কোনও সমস্যা নেই। ও হোস্টেলের জিমে ট্রেনিং করছে। টানা ম্যাচ খেলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই কারণেই ওকে অনুশীলনে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।
তা হলে জিমে কী করছেন তিনি? আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য হাসতে হাসতে বললেন, লিও যে কোনও মূল্যে কাতার বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া। কোচ ওকে বিশ্রাম দিলেও নিজেকে তৈরি রাখতে জিমে ট্রেনিং করছে। একেবারেই সময় নষ্ট করতে রাজি নয়।
তিনি আরও জানালেন, শুক্রবার রাতে লুসেল স্টেডিয়াম থেকে ফিরেই ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের রেকর্ডিং দেখতে বসে পড়েছিলেন মেসি। সেমিফাইনালে লুকা মদ্রিচরা যে তাকে আটকাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেবেন, তা খুব ভাল করেই জানেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। এই কারণেই সামান্য সময়ও নষ্ট করতে রাজি নন তিনি।
জানা গিয়েছে, জিম থেকে ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
উল্লেখ্য, আগামী ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলবে আর্জেন্টিনা। পরদিন অপর সেমিফাইনালে মরক্কো খেলবে ফ্রান্সের বিপক্ষে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।