ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র ভাঙ্গা বাজার, যা স্থানীয় তিনটি উপজেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে সহস্রাধিক দোকান রয়েছে, যেখানে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব পণ্য সহজলভ্য। তবে বাজারের ব্যস্ততা ও বৈচিত্র্যের মধ্যেও যা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তা হলো ভাঙ্গার সুস্বাদু মিষ্টি।
বহু প্রজন্ম ধরে ভাঙ্গার মিষ্টি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। স্থানীয় সুদক্ষ কারিগরেরা বাহারি স্বাদের হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করেন। রসগোল্লা, রাজভোগ, ক্ষীরের চমচম, ল্যান্চা, রসমালাই এবং মালাইচপের মতো মিষ্টির নাম ভাঙ্গার পরিচিতি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও এখন সারা দেশে এই মিষ্টির চাহিদা ব্যাপক। সুদূর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালেও এই মিষ্টি পৌঁছে গেছে, যা ভাঙ্গার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
সেই পঞ্চাশের দশকে এই ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন খোকন দত্ত, অনিল দাস, সরাজকুমার ঠাকুর, বাসুদেব ঘোষসহ কয়েকজন মিষ্টি প্রস্তুতকারক। তাদের মধ্যে খোকন দত্ত ও অনিল দাসের মিষ্টির চাহিদা ছিল সর্বাধিক। যদিও বর্তমানে তাদের উত্তরসূরিরা এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন, কিন্তু ঐতিহ্য ও স্বাদের মান আগের মতোই অটুট রয়েছে।
খোকন দত্তের কর্মচারী স্বপন কুমার দাস গত ৪০ বছর ধরে এই দোকানে মিষ্টি তৈরি করছেন। তিনি জানান, ভাঙ্গার মিষ্টির বিশেষ স্বাদ ও মানের পেছনে প্রধান কারণ হলো সহজলভ্য দুধ, চিনি, ময়দা, খাবার সোডা এবং এলাচের সঠিক ব্যবহার।
সম্প্রতি পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ভাঙ্গার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর ফলে ভাঙ্গার মিষ্টি সারা দেশে আরও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। বাজার সম্প্রসারণ ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে মিষ্টির উৎপাদনেও গত কয়েক বছরে গতি বেড়েছে।
ভাঙ্গার মিষ্টি এখন শুধু একটি খাবার নয়, এটি হয়ে উঠেছে ভাঙ্গার ঐতিহ্যের প্রতীক। এ সুস্বাদু মিষ্টি যারা একবার স্বাদ গ্রহণ করেছেন, তারা জীবনে বারবার এর প্রতি আকৃষ্ট হন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।