মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ঢাকা, মোহাম্মদপুর: রাজধানীর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় দুই পক্ষের মারামারির জেরে নাসির বিশ্বাস (২২) ও মুন্না (২৩) নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষে নাসির ও মুন্না মারাত্মকভাবে আহত হন। তাদের মধ্যে নাসির ছিলেন ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী। 


প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নাসির ও মুন্নাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নাসিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। অন্যদিকে, মুন্নাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “সংঘর্ষে নাসির বিশ্বাস (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি একজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন এবং পাশাপাশি ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। সংঘর্ষের আরেকজন নিহত যুবক মুন্না (২৩)কেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।”


পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে সংঘর্ষের কারণ নিয়ে বিশদ কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, পুরনো বিরোধের জের ধরেই এই ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা নিরাপত্তার স্বার্থে দোকানপাট বন্ধ করে দেন।


এ ঘটনার পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অতিরিক্ত টহল মোতায়েন করা হয়েছে। ওসি ইফতেখার হাসান জানান, অপরাধীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে এবং এর পেছনে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংঘর্ষে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।


নাসির ও মুন্নার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নাসিরের বাবা-মা জানিয়েছেন, তিনি তাদের পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন এবং পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করতেন। মুন্নার পরিবার থেকেও একই রকম শোকের প্রকাশ পাওয়া গেছে। 


এই দুই যুবকের নির্মম মৃত্যু এলাকায় এক বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে, এবং তাদের পরিবারগুলোর প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বিভিন্ন দুষ্কৃতিকারী গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। 


এখন পর্যন্ত ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ, তবে পুরনো শত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।