ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের সুর। গাছে গাছে ফুটবে রক্ত শিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। ফুল ফুটবার পুলকিত এ দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক। কবি মনে জেগে উঠবে নতুন নতুন সব পঙক্তি। বসন্ত বাতাস দোলা দিবে সবার মনে; সাজবে বাসন্তি সাজে। বসন্তরাণীর আগমনে মাতাল হবে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। এজন্যই কবি বলেছেন, ‘ এই ফাগুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি, আমার হৃদয়ের থালা ভরে। দেখা হোক, আদর হোক ভালোবাসায়। দু’টি হৃদয় একটি থালায়, শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।
ঠিক তেমনি ফল্গুনের শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদেরও লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। প্রাণের উচ্ছাসে মেতেছে তরুণ-নবীন প্রাণ। প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হলেও এবার বাংলা দিনপঞ্জিকায় পরিবর্তন হওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দিপসটি উদযাপিত হলো। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন উৎসবের আমেজে। সকাল থেকেই শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ, টুকিটাকি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, পশ্চিমপাড়া, পরিবহন মার্কেট ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রায় শতাধিক স্টল গড়ে উঠেছে।
এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় ব্যাতিক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর এই দিনে এশটি ছবি প্রদর্শন হলেও এবার দুটি প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকেই চারুকলা প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। নানান ধরনের মুখরোচক পিঠার আয়োজন করেছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আনার কলি নামক একটি যাত্রপালা ম স্থ হয়েছে।
এদিন কেউ বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, কেউবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে, কেউবা পরিবারের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেছেন। সবাই একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করছেন বসন্তের শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে সেলফি তো আছেই। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বসন্ত বরণে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ব্যতিক্রম এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে চারুকলার ডীন অধ্যাপক শিদ্ধার্থ সঙ্কও তালুকদার বলেন, ‘প্রতিবছরই চারুকলার আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলো পালন করা হয়ে থাকে। তবে এবারের কিছু আয়োজনে ভিন্নতা রয়েছে। যা অনুষ্ঠানকে স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে। বছরের এই দুটি দিনে চারুকলা প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও বহিরাগতদেরও আগমন ঘটে। আমরা আমাদের এই আয়োজনের মাধ্যমে বাঙ্গালি ঐতিহ্যকে ধারণ করি। বসন্ত বরণে ক্যাম্পাসে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, আশেপাশের স্কুল-কলেজ থেকেও অনেককে আসতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাইন দিপু বলেন, ‘বসন্ত বরণে ক্যাম্পাসে ঘুরতে খুব ভালো লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আড্ডা ও মজা হচ্ছে। প্রতিবছরই এমন আয়োজন বাংলার ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।’
রাজশাহী মহিলা কলেজে পড়ূয়া শিক্ষার্থী নীলা বলেন, ‘বসন্ত এলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। মনে হয় নতুন করে আবার জীবন শুরু করলাম। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততার মধ্যে এ দিনটি যখন আসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা-ঘোরাফেরা সবমিলিয়ে দিনটা অনেক মজায় কাটে।’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।