যেসব কারণে দেশে বাড়ছে ওষুধের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
যেসব কারণে দেশে বাড়ছে ওষুধের দাম

দেশে নিত্যপণ্যের মতো সম্প্রতি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দামও বেড়েছে। গত দেড় মাসে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলোর মূল্য। মানুষের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচের বড় অংশই ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়। এতে ওষুধ ভেদে বড় ব্যবধানে দর বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।


জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ওষুধের বাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি ঔষধ প্রশাসনের। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এভাবে ওষুধের দাম বাড়লে চিকিৎসা বড় সংকটে পড়বে।


ঢাকার বাসিন্দা ইভানা গাজীর বাড়িতে শিশু ও প্রবীণ - দুই বয়সের মানুষের জন্য প্রতিমাসে ওষুধ কেনা বাবদ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা রাখতে হয়। তার সন্তানের প্রায়শই ঠাণ্ডা-জ্বর লেগে থাকে। আর বাবা বেশ কয়েক বছর ধরে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এজন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়।


এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। সেখানে গত জুলাইয়ে বহুল ব্যবহৃত ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে।


ইভানার পরিবারকে এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত কিনতে হয়। ফলে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে।


তিনি বলেন, আমার বাচ্চার ওষুধ যদি ২ থেকে ৪ হাজার টাকা হয়, বাবার ওষুধের দাম যদি ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা হয়, তাহলে মাসে চলব কীভাবে? আমাদের রোজগারই বা কতটুকু। ওষুধ বাদ দিলে তো হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। সেই অবস্থাও তো নেই। ওষুধ তো বাদ দেয়া সম্ভব নয়।


ওষুধের দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্যারাসিটামল, সেই সঙ্গে রক্তাচাপ, হৃদরোগ, ব্যথানাশক ও গ্যাসের সমস্যার নিয়মিত ওষুধগুলোর দাম ৫০% থেকে ১৩৪% বেড়েছে। অর্থাৎ কিছু ওষুধের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে।


ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিকে দুষছেন ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মুক্তাদির। 


তিনি বলেন, গত মাসে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৮০ টাকা ডলারে। শিপমেন্ট পৌঁছানোর পর ডলারের দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। এছাড়া মোড়ক, পরিবহন, বিপণন ব্যয় বাড়ার প্রভাবও ওষুধের বাজারে দেখা যাচ্ছে।


ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো আরও বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দিয়েছে। সেগুলো যাচাই- বাছাই করে, যৌক্তিক মনে হলেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন।


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে একজন মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪% ওষুধ বাবদ খরচ হয়। এটা করতে হয় রোগীর পকেট থেকেই। 


অর্থাৎ দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ওষুধেই মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে। দেশে স্বাস্থ্যবীমা খুবই সীমিত। এতে ওষুধে এ বাড়তি দাম রোগীর ওপরে চাপ আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাহিদ আক্তার জাহান।


এর বাইরে যে ওষুধ রয়েছে, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। অন্যথায় দেশের চিকিৎসা খাত নিম্নবিত্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে যাবে। যার সার্বিক প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়বে।


নাহিদ আক্তার দুটি উপায়ের কথা বলেছেন, সরকার অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। যেন এর বেশি দামে কেউ বিক্রি করতে না পারে। অথবা সরকার নিজেই উৎপাদন করে অল্প দামে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে পারে।


তিনি বলেন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম প্রাইভেট মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়া যাবে না। এই দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। দেশের মানুষকে চিকিৎসা নিতে পকেট থেকেই বেশি খরচ করতে হয়। স্বাস্থ্যবীমা নেই বললেই চলে। তাই এ দামের ওপর সরকারি নজরদারির প্রয়োজন।


দেশে দেড় হাজারের বেশি ধরনের, ৩৫ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে কেবল ১১৭টি ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।


তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা