"ভারতের পতাকা সরিয়ে সাতরঙা পতাকা উড়িয়েছে মণিপুরের ছাত্র আন্দোলন"

নিজস্ব প্রতিবেদক
থৌবম দেবজিৎ , মণিপুর প্রতিনিধি: ভারত
প্রকাশিত: সোমবার ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
"ভারতের পতাকা সরিয়ে সাতরঙা পতাকা উড়িয়েছে মণিপুরের ছাত্র আন্দোলন"

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোমবার সকালে রাজ্য প্রশাসনিক ভবনগুলোতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এদিন রাজভবন এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে একযোগভাবে আক্রমণ করে তারা। হামলার অংশ হিসেবে ডিসি অফিসে টানানো ভারতীয় পতাকা নামিয়ে, সাতরঙা পতাকা উত্তোলন করে শিক্ষার্থীরা, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব ও উত্তেজনা প্রমাণ করে।


স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে এক বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাড়ানো হয় এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।


শিক্ষার্থীরা যে সাতরঙা পতাকা উত্তোলন করেছে তা জাতীয় পতাকা নয়, বরং স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ পতাকা মণিপুর রাজ্যের আঞ্চলিক পরিচয় ও রাজনৈতিক চাহিদার প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করা হয়েছে। তাদের এ পদক্ষেপ মূলত স্থানীয় সরকারের প্রতি তাদের অসন্তোষ ও রাজনৈতিক দাবিগুলির প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানোর উদ্দেশ্যে।


মণিপুর রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে এ হামলা এবং পতাকা উত্তোলনের ঘটনার প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। রাজ্য পুলিশের প্রধান, অশোক কুমার, বলেছেন, "আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।"


এই হামলার পর, রাজ্য সরকার সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি অফিসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে এবং বিভিন্ন জেলা প্রশাসন অফিসেও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।


শিক্ষার্থীরা এই হামলার মাধ্যমে সরকারের প্রতি তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তাদের দাবিগুলি মণিপুর রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি, চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সমাধান সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সরকারের কর্তব্যে দুর্নীতি ও অবহেলার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। 


মণিপুরের রাজনীতির পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এবং এ ধরনের সহিংসতা আরও বড় ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকার কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই।


রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি সম্বন্ধে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় আপত্তি জানানো হয়েছে। “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রস্তুত আছি এবং সকল পক্ষের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাই,” বলেছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব। 


এই ঘটনা মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নাগরিক অসন্তোষের নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে।