বরিশালের বানারীপাড়ায় পুলিশের রাত্রিকালীন টহল ডিউটিতে ব্যবহৃত ইজিবাইক চালককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৮ আগস্ট) ভোরে বানারীপাড়া উপজেলার চৌয়ারীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত চালক ছালাম বেপারী (৬০) একই উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বলহার গ্রামের বাসিন্দা।
বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ আলম চৌধুরী বলেন, থানার টহল ডিউটি দলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ছালাম বেপারী। রাত তিনটার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। বাড়ি ফেরার পথে চৌয়ারীপাড়া এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি ছালামের পথ রোধ করে এবং ইজিবাইক ভাঙচুর করার পাশাপাশি চোর সন্দেহে ছালামকে পেটায় খবর পেয়ে পুলিশের অপর দুইটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ছালামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ছালাম মৃত্যুবরণ করেন।
ওসি আরও জানান, ছালামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার পর চৌয়ারীপাড়া এলাকার আব্দুর রব, ইমরান ও আল আমিন নামের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ওসি জানান, রাত ৩টার দিকে বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের চৌয়ারীপাড়া এলাকা অতিক্রমকালে স্থানীয় আলমগীর ও আব্দুর রবসহ ১০/১৫ জনের একদল লোক ইজিবাইকের সামনে গাছ ফেলে গতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন ছালাম ডাকাত ভেবে ভয় পেয়ে ইজিবাইকে গতি বাড়িয়ে দিলে যানবাহনটির গ্লাস ভেঙে দেয় গতিরোধকারীরা। এতে ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়। তখন গতিরোধকারীরা ছালামকে কিল-ঘুষি দেওয়াসহ লাঠি দিয়ে বেধড়কভাবে পিটিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ সময় ছালাম প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন ওরে তোরা আমারে মারিস না, আমি চোর না, আমি পুলিশ ডিউটি করে এসেছি। কিন্তু তারা কেউ অনুরোধ রাখেননি, মারধর অব্যাহত রেখেছে। এ সময় ছালাম সবার কাছে একটু পানি চেয়েও পায়নি। তখন থানায় খবর নেওয়ারও অনুরোধ করে বলেছিল আমাকে মেরো না, আমার বুকে ব্যথা। একপর্যায়ে তিনি ঢলে পড়েন।
স্থানীয়রা আরও জানান, এর আগে ওই এলাকায় চোর এসেছিল। স্থানীয়রা টের পেয়ে ধাওয়া দেয়। তখন চোর একটি ভ্যানগাড়ি ফেলে চোর পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর কয়েকজন রাস্তায় ছিল। ওই ইজিবাইক নিয়ে যাচ্ছিল ছালাম। তারা তাকে থামানোর চেষ্টা করে। ইজিবাইক না থামানোর কারণে চালক ছালামকে চোর সন্দেহ করে পিটিয়েছে।
উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, চোর ভেবে ভুল করে মারধর করেছে। যারা মারধর করেছেন, তারাই থানা ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। যদি ইচ্ছে করে করতো তাহলে তো তারা থানা ও হাসপাতালে যেতো না বলে মন্তব্য করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
বানারীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।