গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার পরিবারে এক অভাবনীয় দুর্দশার ঘটনা ঘটেছে। এক মাস আগে, জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম যমজ কন্যাসন্তান জন্ম দেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই তিনি মারা যান। তারপর থেকেই শুরু হয় পরিবারের দুর্বিষহ জীবনযাত্রা। মা মারা যাওয়ার পর, জামাল মিয়া তার চার শিশুসন্তানসহ একেবারে একা হয়ে পড়েন। তার মধ্যে সবচেয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে সদ্যজাত যমজ কন্যাদের, যারা মায়ের দুধের জন্য আকুলি-বিকুলি করছে, কিন্তু তাদের মুখে খাবার দেয়ার মতো কিছুই নেই।
এদিকে, জামাল মিয়া পেশায় দিনমজুর হলেও, তাকে গত ৮ নভেম্বর রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জামাল মিয়ার অনুপস্থিতিতে তার সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব পুরোপুরি সাজ্জাদ মোল্লার (১৩) ওপর এসে পড়ে। কিন্তু বয়সে তরুণ সাজ্জাদ কীভাবে তার দুই বোনসহ তিন বোনকে খাওয়াবে, এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এই মানবিক সংকটের মধ্যে ১৪ নভেম্বর, হাইকোর্ট এ ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে স্বপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে দেয়। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জামাল মিয়ার পরিবারকে আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
বিচারপতিরা আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভসহ অন্যান্য আইনজীবীদের নিকট এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন।
জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া জানিয়েছেন, তার ভাই রাজনৈতিকভাবে কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং গ্রেপ্তারের কারণ তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তার ভাইয়ের শিশুদের খাবার নেই, তাদের সহায়তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবা অধিদপ্তর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।