
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ৩:০

কবির কথাও পরিষ্কার, মানুষ চেনা দায়। কবিদের কথা কখনোই ফেলনা নয়। বাসি হলেও তা একসময় ফলে। অতীতে এর বহু নজির দেখেছি আমরা। মানুষ সম্পর্কেও কবির কথা ঠিক। মানুষ চেনা জটিল এক বিষয়। অনেক সময় মানুষ নিজেকেই নিজে চিনতে পারে না। স্বার্থ যখন স্বার্থপরতার সাধারণ সীমা ছাপিয়ে ওঠে, তখনই আমরা তাকে স্বার্থপরতা বলি। নিন্দাও ঠিক তাই। পরের নামে দোষারোপ করতে ও পরের নিন্দা শুনতে সাধারণত লোকের কেন অত ভালো লাগে? এক-এক সময়ে ভেবে দেখতে গেলে আশ্চর্য হতে হয়। মানুষের মনে সৌন্দর্যপ্রিয়তা সর্বদাই জেগে রয়েছে।
বীভৎস-আবর্জনা-রাশি দেখতে তো আমাদের আমোদ বোধ হয় না, তবে পরের নিন্দে শুনতে কেন অত তৃপ্তি? অনেক দূর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এর মূল দেখতে গেলে আত্মশ্লাঘায় গিয়ে পৌঁছিতে হয়। সবকিছুরই একটা চরিত্র আছে। কুকুর প্রভুভক্ত। গরু গৃহপালিত। বাঘ হিংস্র। শীতের চরিত্র এক রকম। আবার গরমের চরিত্র আরেক রকম। বর্ষারটাও তার নিজের মতো। কিন্তু তাদের চরিত্র একটাই। সব সময়ই এক। শীতের সময় পত্রিকার পাতায় শীতের অতিথি পাখির ছবি ছাপা হয়। বর্ষায় কদম ফুল। আবার গ্রীষ্মকালে গরম পড়লে চিড়িয়াখানার বাঘের ছবি ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। চিড়িয়াখানার পুকুরে শরীর ডুবিয়ে বসে আছে বাঘ, গরম কাহাকে বলে! গরমের তীব্রতায় বাঘেরও গাত্রদাহ।
মোটামুটিভাবে এই বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। এসব দেখলে আমাদের কাছে অর্থ পরিষ্কার হয়। আমরা বুঝতে পারি, ঘটনা কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের চরিত্র কী? মানুষের কি নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র আছে? নেই। কারণ মানুষ খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী। ‘হিংসাকৃত ব্যক্তির নেয়ামত ধ্বংসের আকাংখী’। হিংসার পিছে পিছে আসে বিদ্বেষ। সে তখন সর্বদা ঐ ব্যক্তির মন্দ কামনা করে। বস্তুতঃ এ দু’টি বদ স্বভাবের মধ্যে ঈমানের কোন অংশ নেই।কেননা মুমিন সর্বদা অন্যের শুভ কামনা করে। যেমন সে সর্বদা নিজের শুভ কামনা করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্তু ভালবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালবাসে’। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তার ঈমান হয় ক্রুটিপূর্ণ। হিংসা মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য এটাই উত্তম। কেননা হিংসা কেবল হিংসা আনয়ন করে। মানব চরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। হিংসা মানুষের অন্যতম একটি খারাপ গুণ। ইসলামে হিংসা বা বিদ্বেষ পোষনকারীকে খুবই নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়েছে।
হিংসুকের জীবন কখনই সুখের হয় না। কেননা সে সবসময় সকল জিনিসের অধিকারী হতে চায়। তার সর্বদা এই চেষ্টাই থাকে যে, অন্যের কাছে যা আছে তারচেয়ে তার জিনিসটা ভাল হওয়া চাই। আর এই হিংসুক ব্যক্তিই সমাজের অন্যান্য সন্মানিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সন্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তার চেয়ে নগন্য। এই কারণে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তির পরিণাম সম্পর্কে আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, তারা না স্রষ্টার দৃষ্টিতে ভাল আর না সৃষ্টির দৃষ্টিতে। হিংসুককে কেউ ভাল দৃষ্টিতে দেখে না, সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারনা জন্ম নেয়। সমাজে অন্য সবার সাথে বসবাস করলেও মানুষের মনে কোন স্থান তার নেই। কোরআন ও হাদীসে হিংসা এবং হিংসুককে কঠিণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি।

লেখক, রিফাত হোসাইন সবুজ, সাংবাদিক ও কলামিষ্ঠ, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, নওগাঁ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব