আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪ ০৭:০৭ অপরাহ্ন
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেড়েছে

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেড়েছে, এমন তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি এক জরিপে। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার মানুষের মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, ৬১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আগে থেকে বেশি।  


জরিপটি দেশের ৮টি বিভাগে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ২৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মতোই রয়েছে। তবে, ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মনে করেন, এই স্বাধীনতা কিছুটা কমেছে। ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী একমত, বর্তমান সরকারের অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। 


এছাড়া, তরুণদের (১৮-৩৪ বছর) মধ্যে ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারের সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন। 


সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত ৬১ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যম আরও স্বাধীনতা উপভোগ করছে। ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আগের মতোই রয়েছে, এবং ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ দাবি করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কিছুটা কমেছে। শহরে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামে ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ একমত, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেড়েছে। 


তবে আন্তর্জাতিক মহলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ২০২৪ সালের মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১৬৫তম অবস্থানে রয়েছে, যা দেশের জন্য একটি হতাশাজনক অবস্থান। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর আইন এবং নিপীড়নমূলক পরিবেশের কারণে এই পতন ঘটেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।


তবে, সরকারের এসব পদক্ষেপের পরও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা উদ্বেগের বিষয়। সংবাদমাধ্যমের মালিকদের সংগঠন "নোয়াব" এই ধরনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সরকারের কাছে "মব জাস্টিস" প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


এমন পরিস্থিতিতে, জরিপের ফলাফলে দেশের নাগরিকরা মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আশাবাদী হলেও, আরও কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।