ফার্টিলিটি চিকিৎসক যখন নিজেই ৪৯ সন্তানের জনক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৩ই এপ্রিল ২০১৯ ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
ফার্টিলিটি চিকিৎসক যখন নিজেই ৪৯ সন্তানের জনক

নেদারল্যান্ডস এর ঘটনা। সেখানে একজন ফার্টিলিটি চিকিৎসকের কাজ ছিল সন্তান জন্মদানে সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ডাক্তারি সহায়তা দেওয়া এবং তাদের সন্তান নিতে সহায়তা করা। কিন্তু তিনি এ সব ব্যক্তিদের অনুমতি না নিয়ে নিজেই ৪৯টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সেই চিকিৎসক বছর দুয়েক আগে মারাও গেছেন। এখন ডিএনএ পরীক্ষায় ধীরে ধীরে এ সব তথ্য বের হচ্ছে।

ঠিক যা ঘটেছিলো
ডা. ইয়ান কারবাতের ক্লিনিক ছিল নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম এলাকায়। এ সব ক্লিনিকে আসতেন সন্তান নিতে সমস্যা রয়েছে এমন নারী ও দম্পতিরা। ফার্টিলিটি ক্লিনিকের একটি কাজ হল কোনও পুরুষের কাছ থেকে তার দান করা শুক্রাণু সংগ্রহ করা। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু দানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। আবার অনেক সময় চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা শুক্রাণু দানকারীকে নিজেরা পছন্দ করে নিয়ে আসেন। এরপর সেই শুক্রাণু দিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরির পর সহায়তা নিতে আসা ব্যক্তিদের সন্তান জন্মদানে সহায়তা কর হয়। ডা. ইয়ান কারবাতে এ সব ক্ষেত্রে নিজেই নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করতেন বলে এখন জানা যাচ্ছে। তাও আবার চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসা লোকজনের কোনও অনুমতি ছাড়াই।

ঘটনাটি যেভাবে বের হল
এই চিকিৎসকের ক্লিনিকে সহায়তার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর চেহারা দেখতে মারাত্মকভাবে মিলে যাচ্ছিলো ডা. কারবাতের সঙ্গে। সেখান থেকেই সন্দেহের শুরু। ২০১৭ সালে তার সহায়তায় জন্মানো ৪৯ ব্যক্তি ও তাদের বাবা ও মায়েরা একই সন্দেহ থেকে আদালতে মামলা করেন। যাদের বেশিরভাগেরই জন্ম ৮০ দশকে। তাদের সন্দেহ হচ্ছিলো এই চিকিৎসকের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ওই বছরই ৮৯ বছর বয়সে মারা যান সেই চিকিৎসক। এরপর তার বাড়ি ও অফিস থেকে বহু কাগজপত্র জব্দ করা হয়। সেই বছরই ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করে এই ব্যাপারে আদালত জানতে পারে। কিন্তু এতদিন সবগুলো মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে কিছু বাধা নিষেধ ছিল। এখন আদালত তথ্য প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সন্তানদের প্রতিক্রিয়া
এগারো বছর ধরে নিজের বাবাকে খুঁজেছেন তার ক্লিনিকে চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একজন। অবশেষে তিনি জেনেছেন তার বাবা স্বয়ং তার মায়ের চিকিৎসক। তিনি বলছেন, ‘১১ বছর ধরে খোঁজার পর এখন আমি আমার জীবনে ফিরে যেতে পারবো। একটি অনিশ্চিত অধ্যায়ের অবশেষে সমাপ্তি হল। আমি খুশি যে অবশেষে আমি আমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছি।’ ডা. কারবাত নিজেকে দাবি করতেন ‘এসিস্টেড রিপ্রোডাকশন’ বিষয়ক একজন পথিকৃৎ হিসেবে। যদিও ২০০৯ সালেই তার ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে সে সময় অভিযোগ ছিল তিনি শুক্রাণু দানকারীদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে তার জন্ম দেওয়া সন্তানের সংখ্যা হয়ত আরও বেশি হবে।

সূত্র: বিবিসি

ইনিউজ ৭১/এম.আর