আলোচিত ছাগলকান্ডে সেই রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ২১শে জুন ২০২৪ ০৮:০০ অপরাহ্ন
আলোচিত ছাগলকান্ডে সেই রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা পড়া অভিযোগটি যাচাই করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 


দুদক সূত্র জানায়, মতিউরের বিরুদ্ধে আগেও চারবার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। তবে প্রতিবারই তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেয়া হয়েছে। তবে এবার কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, এবার অভিযোগটি কমিশনের ব্যাংক শাখা থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে মতিউর এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


দুদক সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য রয়েছে। বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, ব্যবসা, শেয়ার ব্যবসা, ব্যাংকে নগদ অর্থ, মেয়াদি আমানতসহ সবকিছুই আছে তার নামে। 


মতিউর বর্তমানে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত কয়েক দিনে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় কুরবানির ছাগল, ৭০ লাখ টাকায় কয়েকটি গরু কেনার ছবি ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 


তবে মতিউর বলেছেন, ইফাত তার ছেলে নয়। পরে জানা গেছে ইফাত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনেরা গণমাধ্যমে বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ হিসেবে জানা যায়, ১৫ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।


ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।  তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে। 


আরও জানা গেছে, মতিউর দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। দুর্নীতি-সংক্রান্ত ঝামেলা এড়ানোর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ রেখেছেন তিনি। বসুন্ধরার ডি ব্লকের ১ নম্বর রোডে পাঁচ কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় তিনি থাকেন। বাকি ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া। 


ময়মনসিংহের ভালুকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর তার রপ্তানিমুখী জুতার কারখানা রয়েছে। এর নাম গ্লোবাল সুজ। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মতিউরের রয়েছে বিপুল সম্পদ, প্লট ও বাগানবাড়ি। জেসিএক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি বসুন্ধরায় ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে। এতে তার মালিকানা রয়েছে। গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার। 


রাজধানীর অদূরে সাভার থানার বিরুলিয়া মৌজায় আটটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ এবং একই মৌজায় স্ত্রীর নামে ১৪.০৩ শতাংশ জমি রয়েছে। গ্লোবাল সুজ কোম্পানির নামে সাতটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এছাড়া তাদের নামে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে কয়েকটি। 


দুদক সূত্র জানায়, এর বাইরে তার আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।


সূত্র : সমকাল।