শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবারে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৯শে আগস্ট ২০২৪ ০৮:১০ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবারে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন রোগীরা। এ ছাড়া যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তারা খাবার সরবরাহ না করে অন্য ব্যক্তি এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিল শহরের পৌরসভার মার্কেটের মেসার্স আবেদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করছেন শিবম এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী জয়বিন্দু ধর নামের এক ব্যক্তি। 


হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, রোগীদের সকালের নাশতায় নিম্নমানের পাউরুটি (বন), ছোটো দুটি কলা ও একটি সেদ্ধ ডিম। দুপুর ও রাতে চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিন্মমানের চাল, পাতলা ঢাল। দুই বেলা খাবারের প্লেটে নামে মাত্র মাংস, মাছ, আলু থাকছে প্লেটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন জনপ্রতি রোগীর জন্য সরকারিভাবে ১৭৫টাকা বরাদ্দ রয়েছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী দেখা যায়, সপ্তাহে সাতদিন সকালের নাশতায় রোগীদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ১০০ গ্রাম পাউরুটি (বন), দুটি কলা ও একটি সেদ্ধ ডিম। বিশেষ দিন ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ৩০ গ্রাম ডাল, সপ্তাহে শনি, সোম, বুধ ও শুক্রবারে ২০০ গ্রাম ওজনের মাছ এবং সপ্তাহে রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ১৭৫ গ্রাম মাংস দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ১২০ গ্রামের এক টুকরো মাছ এবং ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম ওজনের মাংস দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে প্রত্যেক রোগীদের জন্য ২৫০ গ্রাম আলু বরাদ্দ থাকলেও দরপত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা দিচ্ছেন ১০-২০ গ্রাম।


সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সুরুক আলী (৬০) নামে এক বয়োবৃদ্ধ রোগী দুপুরের খাবার খেতে বসে অধিকাংশ খাবারই ফেলে দিচ্ছেন। খাবার কেন ফেলে দিচ্ছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, মোটা চালের ভাত, দুর্গন্ধ তাই খেতে পারছি না।


মহিলা ওয়ার্ডের রোগী সালমা বেগম জানান, সকালে ১টি গোল বনরুটি (গোল পাউরুটি) আর দুটি কলা দেওয়া হয়। দুপুর ২টায় দুপুরের খাবার ও বিকেল পাঁচটায় রাতে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। নামে মাত্র মাংস-মাছ, পাতলা ঢাল থাকে প্লেটে।


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর-রাতে রোগীদের নিম্নমানের খাবার এবং সকালে নিম্নমানের নাশতা সরবরাহ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।


 বিশেষ করে গত ২৬ আগস্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে বাবুর্চির সামনে সরজমিনে চাল, ঢাল, মাংস, আলু, পেয়াজ-রসুন, তেল ওজন করে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা হিসেব করে ডায়েট চার্ট অনুযায়ী অর্ধেক কম পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর ভর্তি রেজিস্ট্রারের খাতায় চলতি মাসের ১৪ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের চাল বরাদ্দ ছিল ১৪.৩৫ কেজি, মুসুরি ঢাল ১.২৩ কেজি, মাছ ৮ কেজি ২০০ গ্রাম, তেল ২.৫ লিটার, আলু ১০ কেজি ২০০ গ্রাম, পিয়াজ-রসুন ২ কেজি ৯১ গ্রাম। 


কিন্তু ওইদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্য রিসিভকারী এক নার্সের স্বাক্ষরিত কাগজে দেখা যায়, রান্না ঘরে হামিদ নামের ব্যক্তিটি রোগীদের দুই বেলা রান্নার জন্য ৪ কেজি চাল, ৩০০ গ্রাম ঢাল, ৫ কেজি ৫০০ গ্রাম মাছ, এক লিটার তেল, ৮ কেজি আলু এবং ১কেজি ১২ গ্রাম পিয়াজ-রসুন সরবরাহ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৫ আগস্ট ভর্তি রেজিস্ট্রারের খাতার তথ্য অনুযায়ী মোট রোগী ছিলেন ৩৮জন। দরপত্র অনুয়ায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য ১৩ কেজি ৩০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ থাকার কথা ছিল, দেওয়া হয় সাত কেজি চাল, ১.১৪ কেজি মুসুরি ঢাল বরাদ্দ থাকার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। ৬.৬৫ কেজি মাংস বরাদ্দ থাকার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৫.৪০ কেজি। তেল ১.৯ লিটার বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৯০০ মিলি। আলু ৯ কেজি ৫০০ গ্রাম বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৪ কেজি। 


পিয়াজ-রসুন বরাদ্দ ছিল ১কেজি ৯৩৮ গ্রাম, দেওয়া হয় ১ কেজি ১০০ গ্রাম। ১৬ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগী ছিলেন ৩৩জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য ১১ কেজি ৫০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ থাকার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৬ কেজি চাল। মুসুরি ঢাল বরাদ্দ ছিল ৯৯০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। ৬ কেজি ৬০০ গ্রাম মাছ বরাদ্দ ছিল, দেওয়া হয় ৫ কেজি। তেল ১.৬৫ লিটার বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয় ০.৯ লিটার। আলু ৯ কেজি ৫০০ গ্রাম বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয় ৪ কেজি। পিয়াজ-রসুন বরাদ্দ ছিল ১কেজি ৬৮৩ গ্রাম, দেওয়া হয় ১ কেজি। ১৭ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগী ছিলেন ৪২জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য ১৪ কেজি ৭০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ ছিল, দেওয়া হয় ৮কেজি চাল, মুসুরি ঢাল বরাদ্দ ছিল ২ কেজি ১০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। মাংস রবাদ্দ ছিল ৭কেজি ৩৫০, দেওয়া হয় ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম। আলু বরাদ্দ ছিল ১০ কেজি ৫০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৪ কেজি। 


পেয়াজ-রসুন বরাদ্দ ছিল ২কেজি ১৪২ গ্রাম, দেওয়া হয় ১কেজি। ১৮ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগী ছিলেন ৩৪জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য ১১ কেজি ৯০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ ছিল, দেওয়া হয় ৬কেজি। মুসুরি ঢাল ১কেজি ৭০০ গ্রাম বরাদ্দ ছিল দেওয়া হয় ৩০০ গ্রাম। মাংস বরাদ্দ ছিল ৫কেজি ৯৫০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আলু বরাদ্দ ছিল ৮ কেজি ৫০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৫ কেজি ৩০০ গ্রাম। পেয়াজ-রসুন বরাদ্দ ছিল ১কেজি ৭৩৪  গ্রাম, দেওয়া হয় ১কেজি ১২ গ্রাম।


১৯ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগী ছিলেন ৩৯জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য ১৩ কেজি ৬৫০ গ্রাম চাল বরাদ্দ ছিল, দেওয়া হয় ৯ কেজি ৫০০ গ্রাম। ঢাল ১কেজি ১৭০ গ্রাম বরাদ্দ ছিল, দেওয়া হয় ৬০০ গ্রাম। আলু বরাদ্দ ছিল ৯কেজি ৭৫০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৫ কেজি ৫০০ গ্রাম। 


পেয়াজ বরাদ্দ ছিল ১কেজি ৯০০ গ্রাম বরাদ্দ ছিল, দেওয়া ১কেজি। তেল বরাদ্দ ছিল ১.৯৫ লিটার, দেওয়া হয় ১ লিটার। মাছ বরাদ্দ ছিল ৭ কেজি ৮০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৭ কেজি। ২২ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগী ছিলেন ৬০জন। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিন রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ছিল ২১ কেজি, দেওয়া হয় ১০ কেজি। ঢাল বরাদ্দ ছিল ১ কেজি ৮০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ১কেজি। আলু বরাদ্দ ছিল ১৫ কেজি, দেওয়া হয় ৬ কেজি। মাংস বরাদ্দ ছিল ১০ কেজি ৫০০ গ্রাম, দেওয়া হয় ৮ কেজি। পেয়াজ-রসুন বরাদ্দ ছিল ৩কেজি ৬০ গ্রাম, দেওয়া হয় ১কেজি ৬০০ গ্রাম। তেল বরাদ্দ ছিল ৩ লিটার, দেওয়া হয় ২ লিটার। 


এছাড়া ২৩, ২৪, ২৫ এবং ২৬ তারিখের ভর্তি রেজিস্ট্রারের তথ্যেও দেখা যায় ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওইদিনগুলোতে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারে অনিয়ম করেছে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন নার্স সুপার ভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা নিয়মিত করা হয় কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। বা প্রতিদিন নার্স কর্তৃক মাল রিসিভ করা হলে ওজনে কম বা এতো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় এর দায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাঁর লোকজন ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে রোগীসহ স্থানীয়দের মাঝে মিশ্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 


দরপত্রে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ধরা হয়েছে ৩৯০ টাকা, মাছের দাম কেজি হিসেবে ধরা হয়েছে ৩৭০ টাকা, চালের দাম কেজি হিসেবে ধরা হয়েছে ৬০ টাকা, ডালের দাম কেজি হিসেবে ধরা হয়েছে ১১০টাকা, সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা, কেজি প্রতি পেয়াজের দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা, রসুনের দাম ধরা হয়েছে ১৮০ টাকা, লাইনের গ্যাস থাকার পরও কয়েল লাকড়ির দাম কেজি হিসেবে ধরা হয়েছে ২৮ টাকা, একটি পাউরুটির (বন) দাম ধরা হয়েছে ২০টাকা, দুটি কলার দাম পনেরা টাকা, একটি ডিমের দাম ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। 


বাজার দরের তুলনায় সিংহভাগ পণ্যের দাম দরপত্রে বেশি নেয়ারও পরও খাবারের ডায়েট চার্ট অনুযায়ী রোগীদের বরাদ্দের চেয়েও কম খাবার সরবরাহ করায় একদিকে যেমন রোগীদের কষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সরকারের লোকসানও হচ্ছে।


হাসপাতালের অফিস এবং বাবুর্চি সুত্রে জানা যায়, সকালের নাশতা, সবজি, মাছ, মাংস, মসলা, পেয়াজ-রসুনসহ খাবারের সকল পণ্য এখন হাসপাতালে পৌছে দিচ্ছেন খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি হামিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। 


এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আলাপ হয় হাসপাতালে বাজার পৌছে দেয়া হামিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, আমি সকল বাজার প্রতিদিন হাসপাতালে পৌছে দিচ্ছি কথা সত্য। তবে টেন্ডার পাওয়া আবেদ এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কয়েক মাস আগে এই টেন্ডার কিনেছেন শহরের বই বিপনীর জয়বিন্দু ধর। তিনি এখন হাসপাতালে রোগীদের সকল খাবার সরবরাহ করছেন। কত টাকা দিয়ে কবে টেন্ডার কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন বই বিপনীতে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত সব জানতে পারবেন। 



ওজনে কম এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি হামিদ মিয়া বলেন, ডায়েট চার্ট অনুযায়ী সব খাবার দেওয়া হয়। সরজমিনে রান্নাঘরে বাবুর্চির সামনে খাবারের পন্য মেপে ওজনে কম পাওয়া গেছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা বাবুর্চি এবং সহকারীর দোষ। ওরা রোগীদের কম খাইয়ে সন্ধার সময় সবকিছু নিয়ে যায়। আপনি সন্ধার সময় হাসপাতালে আসলে দেখতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সাজ্জাদ স্যারসহ অফিসের নুরে আলম কয়েছ ভাই বলেছেন মালগুলো শিউলী বুঝে রাখতে। আমি মাল তাকে বুঝিয়ে দেই। 


এবিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীকে জয়বিন্দু ধর বলেন, গত জানুয়ারি থেকে আমি হাসপাতালে রোগীদের সকল খাবার সাপ্লাই দেই। টেন্ডার কার নামে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবেদ এন্টারপ্রাইজের নামে, তবে আমার সিগনেচারকে ভ্যারিফাইড করে আমাকে অথোরাইজ দিয়েছে আবেদ এন্টারপ্রাইজ, যাতে আমি খাবারের বিল তুলতে পারি। এটার লিখিত কোনো ডকুমেন্ট আছে কিনা বা এটার বৈধতা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী রোগীদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না এবং ওজনে কম, খাবারে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে প্রশ্ন করলে জয়বিন্দু ধর বলেন, আমি আবেদ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে মাল সাপ্লাই দেই। যে ছেলেটা হাসপাতালে খাবার পৌছায় সে যথাযথভাবে সরবাহ করছে কিনা তার সাথে আলাপ করে দেখবো। আমি সন্ধায় আপনার সাথে সরাসরি দেখা করে বিস্তারিত আলাপ করবো, আমার বই বিপনীতে একবার আসলে আরও কিছু কথা বলতে চাই। 


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবুর্চিরশিউলী রানি বলেন, রান্নার জন্য সরবাহকৃত বাজারগুলো বুঝে রাখার দায়িত্ব আমার না। শুধুমাত্র আমি রান্না করার দায়িত্বে আছি। প্রতিদিন আমাকে হামিদ ও ঠিকাদাদের লোকজন যখন যা দেন তাই আমরা রান্না করি। তবে হামিদের কাছ থেকে গত মাস থেকে মালগুলো প্রতিদিন রিসিভ করেন হাসপাতালের ইনচার্জে থাকা একজন নার্স। গত ১৪ আগস্ট থেকে থেকে আমি একটি খাতায় প্রতিদিনের বাজারের হিসেব লিখে রাখি। এখানে নার্সের স্বাক্ষরও থাকে। চাইলে প্রমাণও দেখতে পারেন। তবে ২৭ আগস্ট কোনো নার্স মাল রিসিভ করেননি। 


আর আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা। প্রয়োজনে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরাগুলো চেক করে দেখতে পারবেন। আর আপনারাই তো সরজমিনে মালগুলো ওজন করে কম পেলেন। মাল রিসিভকারী কর্তব্যরত নার্সের স্বাক্ষরিত হিসেব এবং ডায়েট চার্ট মিলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন আমাকে মালগুলো কম দেওয়া হয়। আমি যা পাই তাই রান্না করি। এসব বিষয়ে জানতে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আবেদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আবেদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।


নিম্নমানের নাশতা, খাবারে ওজনে কমসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, খাবারের টেন্ডারটি গত অর্থবছরে আবেদ এন্টারপ্রাইজ নিয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন আপতত চালিয়ে নিচ্ছেন। হাসপাতালে খাবার পরিবেশনের এই অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। কয়েকদিন আগে আমার কাছে অভিযোগ আসার পর সাথে সাথে আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষের লোকজন এবং হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করে সতর্ক করে দিয়েছি। সরজমিনে ২৭ আগস্ট ওজনে কম পাওয়ার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন টিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হবে এবং যে হাসপাতালে খাবার পৌছে দেয় তাকে এবং যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকে শোকজ করা হবে। এখন নতুন করে আবার টেন্ডার হবে। অনিয়মে জড়িতদের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হাতে তাকে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান ডা. সাজ্জাদ হোসেন।


রোগীদের খাবারে অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, আমি এ বিষয়টি আগে কখনো শুনিনাই। যখন যে পরিমান রোগী থাকে তখন ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ওই পরিমান খাবার সাপ্লাই দেওয়ার কথা। ওজনে কম বা খাবারে অনিয়ম-দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে বিষয়টি টিএইচও এর সাথে কথা বলে তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।