শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে বরিশালের ঈদ বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৮শে এপ্রিল ২০২২ ০৫:৪২ অপরাহ্ন
শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে বরিশালের ঈদ বাজার

মহামারী করোনার কারণে টানা দুই বছর পর জমে উঠেছে বরিশালে ঈদের বেচাকেনা। দুই বছর পর ঈদ বাজার জমে উঠায় স্বস্তিতে আছেন ব্যবসায়ীরা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে মার্কেটে ভীড় করছেন ক্রেতারা। ব্যস্ততা বেড়েছে দোকানীদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ঈদের কেনাকাটা। এবারের ঈদবাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের আগে থেকে প্রস্তুতিও ছিল। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা মতো পণ্যসামগ্রী তুলে দিতে পারছেন তারা। অপরদিকে করোনাহীন ঈদ বাজারে ক্রেতারাও সন্তষ্ট পছন্দের পণ্য কিনতে পেরে। তবে দাম একটু বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন সবকিছুর দাম বাড়ায় তার প্রভাব সবকিছুর উপরই পড়ছে। শুধু অভিজাত শপিংমলেই নয়। ঈদকে কেন্দ্র করে বরিশালের ফুটপাতেও জমে উঠছে বেচাকেনা। এদিকে ক্রেতাদের সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে বরিশালের প্রশাসন।


নগরীর চকবাজার, কাটপট্টি, গীর্জা মহল্লা, সিটি মার্কেট, মহসিন মার্কেটসহ বিভিন্ন অভিযাত শপিং মলগুলো ঘুরে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। সবচেয়ে বেশি ভীড় দেখা গেছে শিশুদের পোশাকের দোকানে। সন্তানের পছন্দে পোশাক কিনতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, দুই বছর করোনার কারণে সন্তানদের মার্কেটে আনতে না পারায় এবার তাদের নিয়েই মার্কেটে এসেছি। সাধ্যের মধ্যেই সন্তানের পোশাক কিনতে পেরে তিনি বেশ খুশি।


দেখা গেছে, মেয়েরা অভিজাত মার্কেটগুলোতে ভীড় করলেও ছেলেরা ছুটছে ব্রান্ডের শপগুলোতে। এর মধ্যে ইনফিনিটি, ইজি, প্লাস পয়েন্ট, ক্যাটস আই, জেন্টেলম্যান, ভিরগো, বিশ্ব রং, টুয়েলভ, ইয়োলো ফ্যাশন হাউস অন্যতম। তবে অন্যান্য শপগুলোর তুলনায় এসব শোরুমে তুলনামূলক দাম একটু বেশি। তবুও ক্রেতারা তাদের পছন্দের পাঞ্জাবী, প্যান্ট, টিশার্ট ক্রয় করছেন।


নগরীর ফাতেমা শপিং সেন্টারের ইনফিনিটিতে বাচ্চার জন্য ঈদের পোশাক কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান সানি বলেন, সাড়ে তিন বছরের বাচ্চার জন্য একটি জিনস প্যান্ট ১ হাজার ৫০ টাকার সাথে ভ্যাট রেখেছে। সাথে একটি টিশার্ট সাড়ে ৬ শ টাকা রেখেছে। তিনি অভিযোগ করেন, বড়দের থেকে বাচ্চাদের পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া। আর কোনো পোশাক পছন্দ হলে তো কথাই নেই। একটাও দাম কম রাখে না দোকানিরা। 


এবারের ঈদ বাজারে মেয়েদের থ্রিপিসের পাশাপাশি শাড়ির চাহিদাও বেশি। কাতান, সিল্ক, টাঙ্গাইল সিল্ক, ঢাকাইয়া জামদানি ও তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সিল্কের শাড়ি ১৫ হাজার টাকা, ঢাকাইয়া জামদানি ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও তাঁতের শাড়ি ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর চকবাজারে এমআলী ফ্যাশন হাউজে আসা কলেজ ছাত্রী ঈশানা বলেন, ইন্ডিয়ান শারারা নামের একটি ড্রেস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম একদর ৩ হাজার ৫ শ টাকা লেখা। অনেক জোরাজুরি করে দুই শ টাকা কম দিয়েছি। 


এদিকে ঈদ সামনে রেখে বরিশালের অভিজাত শপিং মলগুলোর পাশাপাশি থেমে নেই ফুটপাতের দোকানগুলোও। ফুটপাতেও রীতিমত জমে উঠেছে কেনা-বেচা। নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের দোকানগুলোতে ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। বরিশালে প্রায় ৭টিরও অধিক স্থানে চলছে ফুটপাতে ঈদের কেনাবেচা। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন প্রধান ডাকঘরের সামনে, জেলা পরিষদের সামনে, বিবি পুকুর পাড় ও চৌমাথা লেকের পাড়ে। ফুটপাতে কেনাকাটা করতে আসা সারমিন নামের এক গৃহিণী বলেন, যে জিনিস এখানে ২৫০ টাকা, মার্কেটে সেই একই জিনিস ৫০০-৬০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। লিটন ঘরামী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বড় বড় শপিংমলের থেকে ফুটপাতের দোকানগুলাতে একটু দাম কম। ফুটপাতের দোকানগুলাতে দাম নির্দিষ্ট করা থাকে না তাই দামাদামি করে পছন্দমত জামাকাপড় কেনাকাটা করা যায়। এই জন্য ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করে একটু স্বস্তি পাই। 


ফুটপাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, “আমাদের লাইট, ফ্যান, পজিশন খরচ নেই, দোকানের কর্মচারীর খরচ নেই, তাই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি। তিনি দাবী করেন, শপিংমল আর ফুটপাতের কাপড়ের মান একই। 


এদিকে ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ভীড় বাড়ছে জুতার দোকানগুলোতেও। চকবাজারের মেট্রো সু হাউজ, বরিশাল সু হাউজ, ডায়মন্ড সু হাউজ, বাটা ও এ্যাপেক্স শো-রুমসহ ফুটপাতের জুতার দোকানেও ভীড় দেখা গেছে ক্রেতাদের। এসব দোকানে ৫০০ থেকে শুরু করে ৪/৫ হাজার টাকার জুতাও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য পণ্যের মতো জুতার দামও বেশি।


পণ্যের বেশি দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের পণ্যগুলো আগের থেকে বেশি দামে কেনা পড়ছে। তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। ক্রেতারা না বুঝে অভিযোগ করছেন।


এদিকে শপিংমলগুলোতে অতিরিক্ত দামে পোশাক বিক্রির বিষয়ে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ্ শোয়াইব মিয়া বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। তারপরও যদি কোন ক্রেতা নির্দিষ্ট কোন দোকান/শোরুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে দেখি।