সমঝোতার বৈঠক শেষ, তবে ট্রেন ছাড়ার সময় জানা গেলো না !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:১১ অপরাহ্ন
সমঝোতার বৈঠক শেষ, তবে ট্রেন ছাড়ার সময় জানা গেলো না !

কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের বৈঠক। বৈঠক শেষে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন রানিং স্টাফদের প্রতিনিধি সাইদুর রহমান। এর ফলে সারা দেশে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। রানিং স্টাফদের দাবিগুলো নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।  


সাইদুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বেতন ও অবসর ভাতা সংক্রান্ত তাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান। রানিং স্টাফদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য, সোমবার মধ্যরাত থেকে রানিং স্টাফরা কর্মবিরতিতে গেলে সারা দেশে রেল যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।  


রেল যোগাযোগে স্থবিরতার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে রেলপথ মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ রুটসমূহে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যাত্রীরা তাদের রেলের টিকিট দেখিয়ে বিআরটিসি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকায় থেকে এসব গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে।  


রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রেল কর্মীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে যাত্রীদের চলাচল নিশ্চিত করার জন্য বাস সার্ভিস চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। যাত্রীরা স্টেশনে গিয়ে টিকিটের বিপরীতে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। এই ব্যবস্থা কিছুটা হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব করবে বলে মন্ত্রণালয় আশাবাদী।  


এদিকে কর্মবিরতির ফলে স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীরা বিকল্প পরিবহনের জন্য স্টেশন থেকে বিআরটিসি বাসের দিকে ঝুঁকছেন। তবে অনেক যাত্রীই বাস সার্ভিস সম্পর্কে অসচেতন থাকায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে বাস ভ্রমণ রেলপথের তুলনায় অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় যাত্রীদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  


রানিং স্টাফদের দাবিগুলো নিয়ে রেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও কবে নাগাদ এর সমাধান হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া রানিং স্টাফদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে যাত্রীদের স্বার্থে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।  


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা যাত্রীদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটগুলোতে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায়ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় রানিং স্টাফদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে দ্রুত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার দাবি উঠেছে।  


রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রানিং স্টাফদের মধ্যে চলমান এই অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে এবং রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।