রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খোলা ট্রাকে বালু-মাটি বহন করা হচ্ছে। সড়ক দিয়ে চলাচলরত পথচারী, চালক ও যাত্রীদের চোখে-মুখে বালু ঢুকছে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে ভরাট বালু ও কাটা মাটি ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বহন করা হচ্ছে। এই বালু-মাটি বিভিন্ন বসতবাড়ির ভিটা উঁচুকরণ ও গর্ত ভরাটসহ ইট ভাটায় নেওয়া হয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ট্রাকে বালু-মাটি বহনের ক্ষেত্রে কাপড় দিয়ে ঢেকে বহন করার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা না করে ইচ্ছেমতো বহন করছেন। ফলে চলন্ত গাড়ি থেকে বালু-মাটি উড়ে পথচারীদের চোখে-মুখে লাগছে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। গাড়ির পেছনে থাকা যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালকরা চোখে-মুখে বালু ঢুকে দুর্ঘটনার শিকার হন।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার কয়েক স্থানে স্থানীয় অনেকে বালু ব্যবসা করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ফেরিতে ওঠানামা করছে। দৌলতদিয়ার ৫ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বালুর চাতাল। ফেরি থেকে পরিবহন ওঠানামার সময় ওই চালাতের বালু বহনকারী ট্রাক থেকে ধুলা-বালু উড়ে চোখে-মুখে লেগে যাত্রীদের চরম বিড়ম্বনায় ফেলছে। বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। আবার যানবাহন চালক বা সহকারী এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হয়।
দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকা মেহেরপুর থেকে আসা ঢাকাগামী বাসের চালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরিতে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। সবাই জানালা আটকে গাড়িতে বসে থাকেন। মাঝে মাঝে এলোমেলো বাতাসে সড়কের পাশে থাকা স্তূপের বালু উড়ে চোখে-মুখে লাগে। এ সময় গাড়িতে থাকা যাত্রীরা চরম বিরক্তি প্রকাশ করে। চলতি পথে ফেরি ঘাটে ধুলা-বালুর সমস্যা নিয়ে কে কাকে কী বলবে? কোনও ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে চুপচাপ সহ্য করেন।’
দৌলতদিয়া ঘাটে কথা হয় মোটরসাইকেল চালক সাজ্জাদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে কয়েক স্থানে দাঁড়াতে হয়েছে, সড়কে প্রচুর ধুলা-বালু উড়ছে। এগুলো সাধারণত ড্রাম ট্রাক থেকে সড়কে পড়ে ছিটে মানুষের চোখে-মুখে ও গায়ে লাগছে। প্রশাসনের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আরেক রিক্সা চালক মোবারক খাঁ বলেন, কি বলবো, কাকে বলবো ? বালু-মাটির ট্রাকগুলো সড়ক দিয়ে অনেক গতিতে চলাচল করে, কিছু বলতে গেলে ওরা আমাদের মারতে আসে। এদিকে কোন পুলিশ- প্রশাসনের কোন গাড়ি আটকাতে দেখিনা। আমরা গরিব মানুষ চুপ করে থাকি, কিছু করার নেই।
আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান জানান, আমরা ইতিমধ্যে মাটি ও বালুবাহী ড্রাম ট্রাক, নসিমন, ইটবহনকারী ট্রলির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছি, মহাসড়কে অবৈধ যানের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাথী দাস বলেন, ‘সড়কে খোলা গাড়িতে করে বালু-মাটি বহন করা ঠিক না। এতে চলন্ত গাড়ির পেছনে থাকা যাত্রী বা পথচারীদের চোখে-মুখে ধুলা-বালু ঢুকে সমস্যা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’