রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে আলোচিত নুরুল হক মোল্লা ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলার দুই মাসের বেশি সময় পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আমলি আদালতে অভিযোগ করেন তাঁর শ্যালিকা শিরিন বেগম। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামজিদ হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম বলেন, মামলায় ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খন্দকার আব্দুল মুহিত হীরাকে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন গোয়ালন্দ পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. জালাল উদ্দিন প্রামাণিক, উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব আইয়ুব আলী খান, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মাহাবুব রাব্বানী, আলজামিয়া নিজামিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম, মডেল মসজিদের ইমাম মুফতি আজম, বড় মসজিদের ইমাম হাফেজ আবু সাঈদ (কারাগারে আছেন), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গোয়ালন্দ উপজেলা শাখা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী রাকিব হাসান ও যুগ্ম সমন্বয়কারী নাজমুল ইসলাম, ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মকিম মণ্ডল, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা মেহেদুল হাসান আক্কাছ প্রমুখ।
চলতি বছরে গত ৫ সেপ্টেম্বর জুম্মার নামাজের পর গোয়ালন্দ বাজার সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাব চত্বর থেকে উপজেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে একদল মানুষ বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালায়। হামলাকারীরা শরিয়ত পরিপন্থীভাবে দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে আনে। একপর্যায়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় এলাকায় লাশটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদল লোকের এই হামলায় ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। হামলায় আহত হয়ে মারা যান দরবারের ভক্ত রাসেল মোল্লা।
রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা ৮ সেপ্টেম্বর রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা করেন। এতে রাসেল হত্যাসহ নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, কবর থেকে তাঁর লাশ উত্তোলন করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। মামলাটিতে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার মানুষকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। ওই মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর রাতে থানার উপপরিদর্শক সেলিম মোল্লা তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।