রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার তেনাপচা গ্রামের বাসিন্দা, ডিএমপি পরিবহন বিভাগের কনস্টেবল (বিএ-১৭৭৯৮) শাজাহান মোল্লার বিরুদ্ধে প্রতিবেশী প্রবাসীর জমি জোরপূর্বক দখল, এসিল্যান্ড ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ অমান্য করে বারবার অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ করা, ইউএনও কর্তৃক স্থাপিত সীমানা পিলার উপড়ে ফেলা, না-দাবি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দখলীয় জমি বৈধ করার চেষ্টা এবং জমির মালিকদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিকার চেয়ে গত ২৮-৮-'২৫ তারিখ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হেড কোয়ার্টার এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে মহাখালি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে।
কমিশনার তদন্তের শুনানির জন্য বাদি-বিবাদিকে ১৯-১০-'২৫ তারিখ সকাল সারে ১০ টায় মহাখালীর কার্যালয়ে তলব করেছে।
লিখিত অভিযোগ দায়েরকারী ভুক্তভোগী আলেয়া বেগম, শরিফা বেগম ও বর্ণা বেগম জানান, আমাদের স্বামীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী রয়েছেন।
ইতিপূর্বে সুযোগ বুঝে প্রতিবেশী কনস্টেবল শাজাহান মোল্লা আমাদের মালিকানাধীন জমিতে জোরপূর্বক টয়লেটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এমনকি জমির গাছপালাও কেটে ফেলেন।
এছাড়া গত মার্চ মাসে তিনি লোকজন নিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমরা পুলিশের সহায়তায় কাজ বন্ধ করি।
একইসাথে গত ২৪ মার্চ গোয়ালন্দ উপজেলার এসিল্যান্ড বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
কিন্তু পরবর্তীতে গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এসে তিনি আবারো অবৈধভাবে নির্মাণ শুরু করেন।
তখন আমরা আর্মি ক্যাম্প ও থানা পুলিশের সহায়তায় আবারো কাজ বন্ধ করাই। এর কিছুদিন পর তিনি পুনরায় নির্মাণ কাজ করার চেষ্টা করলে আমরা রাজবাড়ী সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেই। অভিযোগ পেয়ে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কাজ বন্ধ করে দেন।
একইদিন বিকালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদুর রহমান সেখানে আনসার সদস্যদের মোতায়েন করেন।
পরবর্তীতে ইউএনও নিজেই গত ১৯/০৬/২০২৫ ইং তারিখ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু কিছুদিন পর কনস্টেবল শাজাহান মোল্লা ও তার পরিবারের সদস্যরা সেই পিলার তুলে ফেলেন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, "গোয়ালন্দ উপজেলার এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় হওয়ার কারণে শাজাহান মোল্লা একের পর এক এভাবে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে যাচ্ছেন।
এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাদীপক্ষের দাবিকৃত জমিতে কনস্টেবল শাজাহান মোল্লার নির্মিত টয়লেট ও অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে।
এ সময় স্হানীয় কয়েকজন জানান, ইউএনও স্যার মীমাংসার স্বার্থে শাজাহান মোল্লাকে নকশা অনুযায়ী প্রাপ্ত জমি থেকে তিন ফুট জমি বেশি প্রদান করেন। এবং সীমানা পিলার হতে প্রায় ৮ ফুট দূরে প্রস্তাবিত মসজিদের জমিতে নির্মাণ কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তারপরও মসজিদের কাজ শুরু করতে গেলে শাজাহান মোল্লার নির্দেশে তার পরিবারের সদস্যরা কাজে বাঁধা প্রদান করেন।
তার এ সকল অপকর্মের সকল ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও কল রেকর্ড আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে আমরা কনস্টেবল শাজাহানের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় দুটি জিডি দায়ের করি। যার নং ৮৫৯ ও ৭০৪।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নুরুল ইসলাম মামুন হোসেন সহ কয়েকজন জানান, দুই মাসের অধিক সময় ধরে মসজিদের কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজের মালামাল খোলা আকাশের নীচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যার এলাকার গণ্য-মান্যদের সাথে নিয়ে জায়গা মেপে শাজাহানকে বুঝিয়ে দেয় এবং পিলার স্হাপন করে দেয়। কিন্তু তাদের মাপ শাজাহানের পছন্দ না হওয়ায় জটিলতা লেগেই আছে। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, এক বছর আগে বিকেল ৪টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে শাজাহান মোল্লা এবং তার বাবা ও ভাইসহ কয়েকজন মিলে ওই জমির পুরোনো পিলার তুলে বাদীদের জমির কয়েক ফুট ভিতরে স্থাপন করে।
এ সকল বিষয়ে অভিযুক্ত কনস্টেবল শাজাহান মুঠোফোনে জানান, আমার জমির সঠিক মাপ বুঝে পাইনি। তবে আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার সরকারি চাকরি ক্ষতি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে।