উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ অর্জনের সংখ্যা দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বোর্ডে এবার পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যেখানে গত বছর ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ বছর বরিশাল বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫৯ হাজার ২৩৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ হাজার ৬৬ জন। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ছাত্রী ২২ হাজার ৪২৪ জন এবং ছাত্র ১৪ হাজার ৬৪২ জন পাস করেছে। বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের ৪ হাজার ১৬৭ জনের তুলনায় অনেক কম।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এবারও ফলাফলে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। বরিশাল জেলা বিভাগীয়ভাবে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে। তবে বোর্ডের ১২টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি, বিপরীতে দুটি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
১২ কলেজে শূন্য পাস, মাত্র দুই কলেজে শতভাগ সাফল্য:
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী।
তিনি জানান, এ বছর বোর্ডের ৩৪৯টি কলেজের ৩৭ হাজার ৬৬ জন পরীক্ষার্থী ১৪৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১২টি কলেজে কেউ পাস করেনি, আর মাত্র দুটি কলেজে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
শূন্য পাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বরগুনার বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল সদরের কমার্স কলেজ, বাবুগঞ্জের মোহনগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলার দেলুয়া তালুকদার বাড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বালুরচর দালাল বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভাষা শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও মেদুয়া কলেজ, ঝালকাঠির রাঙ্গাপাশা সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আব্দুস সালাম কলেজ এবং পটুয়াখালীর আউলিয়াপুর সাবিনা আক্তার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুমকি নাছিমা কেয়ামত আলী মহিলা কলেজ।
এছাড়া বরিশাল বোর্ডের ১৯৭টি কলেজে ৫০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে। অপরদিকে, ১৩৮টি কলেজে পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে এবং ১০ শতাংশের নিচে পাস করেছে দুটি কলেজ।
বরিশাল জেলা ফলাফলে শীর্ষে, বরগুনা তলানিতে:
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে জেলাভিত্তিক ফলাফলে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল জেলা। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম পাসের হার নিয়ে তলানিতে অবস্থান করছে বরগুনা। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী এ বছর বরিশাল বোর্ডে ফলাফল আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও নিয়মিত পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করেছে। বোর্ডে গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ হলেও বরিশাল জেলা এককভাবে এগিয়ে আছে ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ পাস নিয়ে।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পিরোজপুর (৬৪ দশমিক ৭৮%), তৃতীয় ভোলা (৬২ দশমিক ৯৮%), চতুর্থ ঝালকাঠি (৫৮ দশমিক ৬৪%), পঞ্চম পটুয়াখালী (৫৭ দশমিক ৪৪%) এবং ষষ্ঠ স্থানে বরগুনা (৫১ দশমিক ৭৭%)।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সর্বোচ্চ এবং জিপিএ-৫ অর্জনকারীও সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞান বিভাগে ৮০৬ জন, মানবিক বিভাগে ৭৭৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলাভিত্তিক বৈষম্য কমাতে কাজ চলছে, তবে ফলাফলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শিক্ষকদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
জিপিএ-৫ কমলো আড়াই হাজার, বোর্ডে হতাশা:
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের পতন ঘটেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, গত বছর পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, আর এবার তা নেমে এসেছে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। পাশাপাশি, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের ৪ হাজার ১৬৭ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৪ জনে। যা প্রায় আড়াই হাজার কম।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর জি. এম. শহীদুল ইসলাম জানান, বিগত বছরের মতো এবারও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে। পাসের হারে দুই লিঙ্গের মধ্যে ব্যবধান ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। মেয়েদের গড় পাসের হার ৭১ দশমিক ৪১ শতাংশ, যেখানে ছেলেদের ৫২ দশমিক ৬০।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে সবচেয়ে ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগ। এ বিভাগে পাসের হার ৭১ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮০৬ জন (৪৮২ মেয়ে ও ৩২৪ ছেলে)। মানবিক বিভাগে ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৬২ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তিন বিভাগেই মেয়েরা জিপিএ-৫ অর্জনে এগিয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য এ বছর ১৪৪টি কেন্দ্রে ৩৪৯ টি কলেজের ৬১ হাজার ৪৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহণ করে ৫৯ হাজার ২৩৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ হাজার ৬৬ জন।