প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২
নওগাঁ জেলার সাপাহারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন “সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় গভীরতা না রক্ষা করার কারণে সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পটি কার্যকারিতা হারানোর পথে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬টি ইউনিয়নের ৭২টি পাম্প স্থাপনের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কামাল এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ প্রায় ৯৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা হলেও বাস্তবায়নে মানদণ্ডের লঙ্ঘন ঘটেছে।
প্রকল্প অনুযায়ী পাম্প স্থাপনের আগে নির্ধারিত আরএফএল ব্র্যান্ডের টেস্টিং পাম্প ব্যবহার করা হবে, কিন্তু প্রকৃত বাস্তবায়নে কম মূল্যের গাজী ব্র্যান্ড ব্যবহার করা হয়েছে। বোরিং পাইপে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের পাইপের পরিবর্তে অজ্ঞাত ও নিম্নমানের পাইপ বসানো হয়েছে। ফিল্টার, থ্রেড পাইপ ও এলবো সরঞ্জামেও মানদণ্ডের লঙ্ঘন ঘটেছে। ফলে বহু স্থানে পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং কোথাও পানি উঠছেই না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত সেবা ফি ৭ হাজার টাকা হলেও অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। প্রায় কিছু ক্ষেত্রে ৭,২০০ থেকে ৭,৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। এছাড়া, প্রকল্পে বোরিং গভীরতা ২৫০ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ১২০ থেকে ১৫০ ফুট গভীরে পাম্প বসানো হয়েছে, ফলে আয়রনযুক্ত পানি উঠছে।
স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছেন, তারা কৃষক হলেও পাইপের মান ও পাম্পের কার্যকারিতা বুঝতে পারছেন। কিছু এলাকায় পানি ঠিকমতো উঠছে না এবং উপকরণ নিম্নমানের। তাঁরা দাবি করছেন, দুর্নীতিতে জড়িত ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক এবং দায়সারা নিশ্চিত করা হোক।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল গাফ্ফার ফোনে যোগাযোগে আসেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রবিউল ইসলামও প্রশ্নের পর ফোন কেটে দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদ আলম জানান, অভিযোগ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ও অপরাধমূলক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতারা জানান, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। সংশ্লিষ্টরা দ্রুত তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। এলাকার মানুষ সচেতন হয়ে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হলে সাপাহারের মানুষের দীর্ঘদিনের পানি সমস্যার সমাধান হবে এবং বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হবে। এলাকাবাসী আশা করছেন প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রকল্পটি নিরাপদ ও কার্যকরভাবে শেষ হবে।