“একসময় ভোরে নদীতে নামলেই জাল ভরে ফিরতাম, এখন বুকের ভেতর ভয় কাজ করে—আজ কিছু মাছ পাব তো?”—এভাবেই জীবনের লড়াইয়ের গল্প শুনালেন সাতক্ষীরার আশাশুনির কুল্যার জেলে রনজিত।
কেবল রনজিত নন, আশাশুনি উপজেলার কুল্যা, শ্রীউলা, কাদাকাটি, বুধহাটা ও দয়ারঘাট এলাকার শত শত জেলে পরিবার আজ টিকে থাকার লড়াই করছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম নদী, খাল-বিল থেকে মাছ ধরে সংসার চালালেও বর্তমানে নদীতে নাব্যতা সংকট, পানি দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাছ প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে।
আগে যেখানে রাতভর জাল ফেললে নৌকা ভরে যেত, এখন দিনভর পরিশ্রম করেও খরচ ওঠে না। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলেরা। অনেকেই ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন। শিশুদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসার খরচ যোগানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় জেলে প্রবীর পরামান্য বলেন, “আগে মাছ ধরলেই খাওয়ার চিন্তা থাকত না। এখন ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি। সংসার চালানোই দায় হয়ে গেছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত জাল ব্যবহার, নির্বিচারে পোনা মাছ ধরা ও নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে মাছের প্রজনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জেলে পেশা বিলুপ্তির পথে।
জেলেরা সরকারের কাছে বিকল্প কর্মসংস্থান, সহজ শর্তে ঋণ এবং নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সহায়তা পেলে হয়তো টিকে থাকার সুযোগ তৈরি হবে।