গবাদিপশু খাতে ভরসা হারাচ্ছেন দ্বীপাঞ্চলের কৃষকরা

পটুয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী দীর্ঘদিন ধরেই গরু ও মহিষ পালনের জন্য উপযোগী এলাকা হিসেবে পরিচিত। চারপাশের নদী-নালা, চরাঞ্চল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে এখানকার কৃষক-খামারিরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে গবাদিপশু পালনকে জীবিকা হিসেবে নিয়েছেন। তবে চলতি বছর তাদের সেই আশার আলো ম্লান হয়ে পড়েছে। বাজারে গবাদিপশুর দাম আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় তারা পড়েছেন বড় ধরনের সংকটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া মাঝারি আকৃতির গরু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে খামারিদের খাওয়ানো-চিকিৎসা ও লালনপালনের খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিটি গরুতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন তারা।

চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের খামারি মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, “প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার গরু কিনে মোটাতাজাকরণ করে ভালো লাভ পেতাম। কিন্তু এবার ২২টি গরু কিনে এক বছর খাওয়ানো-চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা, অথচ বিক্রিতে তার অনেকটাই ওঠেনি। উল্টো বড় লোকসানে পড়েছি।”

এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও চাহিদার ঘাটতিই বাজার ধসের অন্যতম কারণ বলে অভিযোগ খামারিদের। তারা জানান, হাটে গরুর ক্রেতা নেই, দালালরা প্রকৃত দাম দিতে চায় না। বাধ্য হয়ে অনেকেই পশু বিক্রি না করেই বাড়ি ফিরছেন। প্রত‍্যন্ত রাঙ্গাবালী থেকে পশু পরিবহনের খরচও বেশ বেশি, ফলে লোকসানের বোঝা আরও বাড়ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, “আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং খামারিদের সহায়তায় পাশে আছি। তবে এ সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। জাতীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ নিলেই কেবল এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।”

রাঙ্গাবালীর কৃষক-খামারিদের আশঙ্কা, এভাবে দাম কমতে থাকলে তারা বাধ্য হয়ে গবাদিপশু পালন ছেড়ে দিতে পারেন। তখন একটি সম্ভাবনাময় খাত ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে চলে যাবে, যা শুধু স্থানীয় অর্থনীতি নয়—গ্রামীণ জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।